মুখ থুবড়ে পড়েছে দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
| আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১১ | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৮

দেশের উত্তরাঞ্চলে আবিষ্কৃত ৫টি কয়লাখনির মধ্যে দিনাজপুরে রয়েছে ৩টি। সেগুলো অবস্থিত বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দিঘীপাড়ায়। বাকি দুটি খনি রয়েছে রংপুরের খালাশপীর ও জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে।

এই ৫টি খনির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘দীঘিপাড়ার কয়লাখনি’। যেখান থেকে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। শুধুমাত্র এ কয়লাখনিতে মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৪শত ৬২ মিলিয়ন টন কয়লা।

১৯৮৫ সালে বিওএইচপি নামক একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে আরেকটি কয়লা খনি আবিষ্কার করেন। ১৯৯৭ সালে লন্ডন ভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি এ এলাকায় ১০৭টি কূপ খননের মাধ্যমে উন্নতমানের কয়লা আবিষ্কার করেন। এই কয়লাখনিতে ৬.৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫শত ৭২ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ নির্ধারণ করে।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্তিক জরিপ অধিদপ্তর আবিষ্কার করে। দীর্ঘ একযুগ ধরে বেশ কয়েকটি কূপ খনন করে ৫’শ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের পরিমাণ যাচাই করে।

বর্তমান বাংলাদেশ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিএমসিএল’র মাধ্যমে ৩ বৎসর মেয়াদি জরিপ কাজ চালানো হয়। জরিপ কাজ শেষে চীনা কোম্পানি দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। এই খনিটির তদারকি দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে মো. জাফর সাদিক।

প্রকল্প পরিচালক সমীক্ষা শেষ করে খনিটির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে খনিটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। বর্তমান সরকার দেশের ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানি খাতে ব্যবহার করবে না বলে জানিয়ে দিলেও বর্তমান জ্বালানি খাতের সঙ্কটের কারণে এই খনিটি বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেলেও এখন পর্যন্ত সরকার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এই খনিটি বাস্তবায়ন করা হলে মজুদ কয়লা জ্বালানি খাতে সহায়ক হবে।

দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে যেসব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশীয় অর্থে ও বিদেশি বিনিয়োগে তৈরি করা হয়েছে সেসব কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ না থাকলে এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারণে এখনি উত্তম সময় দিঘীপাড়ার কয়লা খনিটি বাস্তবায়ন করে কয়লা উত্তোলন করা প্রয়োজন। তেল, গ্যাস এর উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা আমাদের দেশের মতো এতো উন্নত নয়। তারা তাদের দেশের অউন্নত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করছে।

এতে একদিকে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি নির্ভর কমে যাবে। বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখ হয়েছে। ৬.৬৮ বর্গকিলোমিটার কয়লার ক্ষেত্রে ১১৮ থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় ৬টি স্থরে কয়লার মজুদ ৩৯০ মিলিয়ন টন। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ১৯ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মেট্রিকটন কয়লা উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে সুরঙ্গ পথে কয়লা উত্তোলণ অব্যাহত রয়েছে। সুরঙ্গ পথে চীনা প্রযুক্তিতে কয়লা তোলায় খনিটির অফুরন্ত ক্ষতি হচ্ছে।

অন্যদিকে খনিতে ব্যয় বাড়ছে। থেকে যাচ্ছে প্রায় ৮০ভাগ কয়লা। উঠে আসছে ২০ভাগ কয়লা। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে ধুকে ধুকে চলছে। বর্তমান ২নং ও ৩নং ইউনিট চালানো হচ্ছে। যে ভাবে চালানো হচ্ছে তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না বলে জানা গেছে।

এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভূগর্ভ থেকে স্বল্প মাত্রায় কয়লা উত্তোলন চলছে। ভূর্গভ থেকে আগের মতো এখন আর কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৭ইং সালের মধ্যে কয়লা খনিটির উৎপাদন অনেক অংশে কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে করলে সরকার লাভবান হবেন। এই এলাকার মানুষের নতুন নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে এবং জীবন জীবিকার পথ সুগম হবে। দিঘীপাড়ার কয়লাখনির মজুদ কয়লা উত্তোলনে সরকারের এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত কিন্তু সরকার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে কয়লা আমাদনি করছেন এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে জ্বালানিতে ব্যবহার করছেন। এই এলাকার কয়লা উত্তোলন করা হলে একদিকে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানি খাতে ব্যবহার সময় হলেও সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি নির্ভর ও অর্থ ব্যয় করে কয়লা আমদানি করা বন্ধ করে দিঘীপাড়ার কয়লাখনি কয়লা দিয়ে জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করা এখনি সঠিক সময়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লার চড়া মূল্য হওয়ায় দেশে স্থাপিত কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি যেহেতু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেজন্য সরকারকে এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫টি কয়লাখনির মজুদ ৩,১৯৭ মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানির উৎস গ্যাস। বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে জ্বালানি খাতের অবস্থা লাজুক।

এছাড়া দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়েকটি পাওয়ার প্লান গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। দেশের গ্যাস মজুদ যেহেতু অফুরন্ত নয়, তাই আগামী দিনে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে উত্তরাঞ্চলের ৫টি কয়লা খনি। দেশে আবিষ্কৃত কয়লা ৫৩টিসিএফ গ্যাসের মজুদ, যা দেশে এ পর্যন্ত আহরিত গ্রাসের প্রায় ৪ গুণ বেশি বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :