ঢাকা-১৯: চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার এনাম

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে সংসদ সদস্য পদে মোট ১০ জন অংশ নিলেও নৌকা ও আওয়ামী লীগ দলীয় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারণা ও গণসংযোগে কেবল এই তিন প্রার্থীর দেখা মিলছে আর বাকি প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তবে দুই হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়াই করা মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী গত দুইবারের সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর এই আসনে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী অংশ নেওয়ায় অনেকটা জমজমাট নির্বাচনের আশাবাদ তাদের। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট ও জাতীয় পার্টির মতো দলগুলোর প্রার্থী না থাকায় ভোটারদের একটি অংশ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বলেও জানান তারা। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পরায় নৌকার প্রার্থীর ভোট কমার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদকে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দেখছেন অনেকে। স্থানীয়দের দাবি তার পারিবারিক পরিচিতি এবং স্থানীয় সাবেক আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মী ও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় এবারের নির্বাচনে তার অবস্থান বেশ শক্তিশালী।
সাভার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, গত ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সংসদ সদস্য নিজের নেতৃত্বে একজন আওয়ামী লীগের কর্মী তৈরি করতে পারেনি। উল্টো দলের ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা যাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করেছেন। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভেতর এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। আর মুরাদ জং আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, তার বাবা সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাবা ছেলে মিলিয়ে তিনবার এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাই সবদিক বিবেচনায় মুরাদ জংয়ের পক্ষেই দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী কাজ করছেন এবং ভোটাররাও তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
অন্যদিকে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নির্বাচনে অংশ নিতে ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। দীর্ঘ ৭ বছর ওই ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এবং আশুলিয়ার শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়াও ভোটের হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ আশুলিয়ার দুই ইউনিয়ন পাথালিয়া ও ইয়ারপুরের চেয়াম্যানরা তাকে সমর্থন দেওয়ায় তিনিও রয়েছেন বেশ শক্ত অবস্থানে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা হলেই সাইফুল ইসলাম নিজে উদ্যোগী হয়ে দ্রুত সেটি সমাধান করেছেন, পাশাপাশি করোনা মহামারির সময় সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে সার্বক্ষণিক শ্রমিকদের পাশে ছিলেন তিনি। শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের একটি কবরস্থানের দাবিটিও তিনি বেশ কয়েকমাস আগে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী শ্রমিক অধ্যুষিত আশুলিয়ার ভোটাররা সবাই তাকেই ভোট দিবেন নিজেদের স্বার্থেই।
তবে গত দুটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়ে সংসদে বসা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, গার্মেন্ট শিল্প ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্কসহ আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কোন কাজে না জড়ানোয় সাভারে ভোটারদের একটি অংশের কাছে জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। এ কারণে এনামুর রহমান নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।
সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র ও হাজী আব্দুল গণি বলেন, এনাম সাহেব ভদ্রলোক, দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনেন। তার বিরুদ্ধে ঝুট ব্যবসা, জায়গা দখল এমন কোনো প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বা মদদের অভিযোগ কখনোই উঠেনি। তাই সাভারের মানুষ এনাম সাহেবকেই ভোট দেবেন।
(ঢাকাটাইমস/০৪জানুয়ারি/ইএইচ)
মন্তব্য করুন