নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা
লাঙ্গল সমর্থকদের বাড়িতে নৌকার শতাধিক সমর্থকের একযোগে হামলা, ভাঙচুর-লুটপাট
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি-ঘরে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই আসনে বিজয়ী নৌকার শতাধিক সমর্থক একযোগে এ হামলা চালাল বলে জানান উপজেলা জাপা নেতারা।
রবিবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার খবর আসে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন পুরো সোনারগাঁয়ের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। আক্রান্তদের সবাই লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্ট।
লিয়াকত হোসেন খোকা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাননি মেম্বার, তাদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা।
তিনি বলেন, রবিবার বিকালে নোয়াগাও ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সাকিব হাসান জয়ের বাড়িতে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি জাতীয় পার্টির সমর্থিত ইউপি সদস্য।
খোকার নির্বাচনি সমন্বয়কারী মাহমুদুল আনোয়ার জানান, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল্লাহ সরকারের ভাতিজা ও বাচ্চু সরকারের সাব্বির ও শফিকুলের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থক শতাধিক সন্ত্রাসীরা এ মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে সাকিব মেম্বার বলেন, আমি জাতীয় পার্টির সমর্থক হওয়ায় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পরপরই আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় আমাদের বাড়ির অন্তত ৩৫টি ঘর, ফ্রিজ, টিভি, খাট, শো-কেস, আলমিরাসহ সব আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। আমার স্ত্রীর ৩৫ ভরি স্বর্ণ, মা ও বোনের ১৫ ভরি স্বর্ণসহ গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
এসময় তার বোন সোনিয়া আক্তার, বাড়ির মাসুদ রানা (২৫), নয়ন (৩০) সহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
মেম্বারের বোন সোনিয়া আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তারা পাস করার পর সব শেষ করে দিয়া লাইছে আমগো। বাচ্চুর বাড়ি ও ফকির বাড়ির পোলাপান সব শেষ করে দিয়া গেছে আমাগো। আমগো সবকিছু লুট কইরা নিছে গা ওরা। আমাদের পুরা বাড়িতে ভাঙচুর করছে, আগুন লাগাইয়া দিছে। ৩০/৪০টি বাড়িতে লুট করছে।
মেম্বারের মা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার ঘরে লুট করছে। আমি যে পানি খাব, সেই গ্লাসটাও নাই। আমার ঘর দুয়ার সব লুট করে নিছে। আমাদের পরিবারের ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিছে। এছাড়া ঘরের গুরুত্বপূর্ণ সব জিনিসপত্র নিয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট সকল জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। হঠাৎ করে এক থেকে দেড়’শ সশস্ত্র মানুষের আক্রমণের ঘটনায় তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। পুরো বাড়িতে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এদিকে, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে নোয়াগাঁও এর একটি ভোটকেন্দ্রে জাতীয় পার্টির পোলিং এজেন্ট আবু তাহেল (৩৩) ও আলম নামে দুজনের ওপর হামলা চালায় নৌকার সমর্থকরা। তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়, দুজনই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া, নির্বাচনের আগের দিন রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিলি করার সময় বাধা দিলে সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থক জামপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার শিল্পি বেগম ও সাবেক মহিলা মেম্বার তাহমিনা বেগমের ওপর নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালান।
হামলার শিকার সাবেক মেম্বার তাহমিনা বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাতে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা টাকা বিতরণ করার সময় বাধা দিলে তারা আমাদের ব্যাপক মারধর করে। এসময় আমিসহ বর্তমান মেম্বার শিল্পী আক্তারও গুরুতর আহত হই।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা অলি মিয়ার ছেলে শুভ, আমিনদ্দিন, রতনের ছেলে রনি, সোহেল, জিল্লু প্রধানের ছেলে জাকারিয়ার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ওপর হামলা চালান। এসময় তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/জেবি/ইএস)