সাংস্কৃতিক বিকাশে সুরভিত হোক ইটপাথরের উন্নয়ন

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
| আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২১ | প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৭

৫২’র ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একাত্ম হয়ে পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে বহু সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও লাখো শহিদের রক্তমূল্যে ’৭১-এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত উন্মেষ ঘটেছিল। ভাষাভিত্তিক চেতনাজাত সংস্কৃতি বাঙালিকে এক সুতোয় গেঁথেছিল বলেই আমাদের জাতীয়তাবাদের মূল উপজীব্য হলো মাতৃভাষা ও একটি পরিপূর্ণ ভাষানির্ভর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিনির্ভর সামাজিক মনন'ই মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রার অনুষঙ্গ হিসেবে একটি অসাম্প্রদায়িক একাত্মতার চেতনায় বিকশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ভাষাভিত্তিক সংস্কৃতিজাত এই চেতনা উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে। ব্রিটিশ শাসনকালেই ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনের চিত্র আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ একক কোনো জাতীয়তাবাদের দর্শনে একীভূত হয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়নি। বলতে দ্বিধা নেই, ধুরন্ধর ব্রিটিশ জাতি বিষয়টি স্পষ্ট অনুধাবন করেই শোষণোত্তর সাম্প্রদায়িক মনস্তত্ত্বকে বিবেচনায় নিয়ে ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতি তত্ত্বে এই রাষ্ট্রকে বিভাজিত করে। ফলে বাংলার এই প্রান্তে মাতৃভাষা রক্ষা আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক রূপলাভ করাটা এত সহজ ছিল না মোটেই। অগ্রজদের চর্চিত সাম্প্রদায়িক রূপ থেকে বের হয়ে এসে ভাষাভিত্তিক আন্দোলন আমাদের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক পরিচয়ে আগামীর পথ চলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রেক্ষাপটে বিভাজিত হয়ে জন্মগতভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশীদার হয়েছিলাম আমরা। ধর্মের দোহাইয়ে বিভাজনবলেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বেড়াজালে আটকে পড়তে হলো আমাদেরকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তদানিন্তন এই বাংলায় মুসলিম, হিন্দুসহ বেশ কিছু ধর্মের মানুষের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘদিনের ধর্মীয় রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, শাসন ও নির্যাতনের চিত্র আমাদের নিষ্পেষিত করতে থাকলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মীয় রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দর্শনকে ধারণ করেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানিদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংগঠনকে শক্তিশালী করে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে থাকেন। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন চলাকালে জেলখানায় অনশনে থেকেও সে সময়ের আন্দোলনরত নেতাকর্মীদেরকে নেতৃত্ব প্রদান করে তিনি যে আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়েছিলেন, পরবর্তীতে সেই চেতনাকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে নিজ দল আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিস্থাপিত করতে থাকেন। জেল জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে ২৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ১৩ বছরের অধিক সময় কারাবন্দি থাকলেন। সময়ের প্রয়োজনে ’৬৬ থেকে ’৬৯-এর মধ্যেই তিনি হয়ে উঠলেন বাংলার অবিসংবাদিত মহান নেতা। ভূষিত হলেন 'বঙ্গবন্ধু' নামে। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে নিজের আত্মবিশ্বাস আর ত্যাগের মহিমায় তিনি এই বাংলায় ধর্ম, বর্ণ ও জাত-পাত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের তাঁর সেই অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ছায়াতলে একত্রিত করে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। ধর্মীয় বিভাজনে মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলে সকলকে এত দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পতাকাতলে একীভূত করার ইতিহাস বিশ্বে বঙ্গবন্ধু ব্যতীত বিরল। ’৭০-এর নির্বাচনে তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু, ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া এমন মহান নেতা সৃষ্টিকর্তার দৈব আশীর্বাদে আলোকিত হয়ে হিমালয়ের চেয়েও দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস লাভ করেছিলেন। এই প্রবল আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংকল্প স্থির করেন। সেই সাথে তিনি বিশ্বাস করতেন মুক্তিযুদ্ধ করার এটাই সঠিক সময়, কেননা বিশ্ব রাজনীতিতে তিনি যে প্রজ্ঞা অর্জন করেছিলেন তা এতটাই নিখুঁত ছিল যে, তিনি বিশ্বাস করতেন আশির দশকে রেড আর্মির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব একমুখী পশ্চিমা মোড়লদের হাতে চলে যাবে। তখন বিশ্বমানের সামরিক শক্তিধর পাকিস্তানি রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করা সহজ হবে না। কারণ- পশ্চিমারা সরাসরি পাকিস্তানকেই সমর্থন করবে। ফলস্বরূপ, তিনি সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ের পর পরই মুক্তিযুদ্ধের পথে হাঁটেন এবং ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম দেন।

কী অদ্ভুত তাঁর সেই সম্মোহনী শক্তি! কী দারুণ তাঁর সাবলীল সরলতা! বস্তুত, কতটা মার্গীয় উচ্চতার দৈবালোকিত নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু- তা উপলব্ধি করতে স্বল্প পরিসরের কোনো আলোচনাই যথেষ্ট নয়। হাজার হাজার জানা অজানা প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাত্র একটি বিষয়কে চিন্তার খোরাক হিসেবে উল্লেখ করছি। জন্মগতভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি একটি বিশেষ ধর্মীয় পরিচয়ে মুক্তি লাভ করে। অথচ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নাগরিক পরিচয় রয়েছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নানান ধর্মের মানুষ। সংগত কারণেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নানা রকমের ধর্ম-কর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-গরিমা, আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিকতায় বিস্তর অমিল রয়েছে তাদের মধ্যেই। একই সাথে রাজনৈতিক চরিত্র ভাষা ও সংস্কৃতির বিস্তর ফারাক বিদ্যমান রাষ্ট্রটির পশ্চিম এবং পূর্বাংশে। শুধুমাত্র একটি ধর্মের প্রতিচ্ছবি নিয়ে জন্ম লাভ করা রাষ্ট্রটির পরিচিতির স্বরূপ সাম্প্রদায়িক। এমন চরিত্রের একটি রাষ্ট্র থেকে বের হয়ে এসে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম বিকল্পটি বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অসাম্প্রদায়িকতা কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্যতম অনুষঙ্গ করেন তাঁর রাজনীতিতে। কিন্তু বিষয়টি কতটা কঠিন তা বুঝতে চাইলে এভাবেই বোঝা বাঞ্ছনীয় যে, তিনি ব্যতীত বিশ্বের কোনো নেতা এই অনুষঙ্গকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়ে তাঁর মতো করে সফল হয়েছেন এমন কোনো উদাহরণ নেই। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ছত্রছায়ায় বাস করেও সাধারণ মানুষের মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত করে কীভাবে বঙ্গবন্ধু ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের মনন জাগ্রত করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর!

ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন এনে, মানুষকে ভালোবেসে এবং মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ জন্ম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আত্মবিশ্বাস এতটাই গগনচুম্বী হয়েছিল যে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একবারের জন্যও তিনি বিশ্বাস করেননি যে, এ দেশের কোনো মানুষ তাঁকে অসম্মান করতে পারে, তাঁকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে এ দেশেরই কিছু পথভ্রষ্ট ক্ষমতালোভী বর্বরের হাতে তিনি সপরিবারে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। বঙ্গবন্ধু-উত্তর এ দেশের লম্বা একটি সময়ের ইতিহাস অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করে পুনরায় সাম্প্রদায়িক অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল। খুবই প্রাসঙ্গিকভাবে মনে পড়ে, ওপার বাংলার স্বনামধন্য বাঙালি নায়ক উত্তম কুমার যথার্থই বলেছিলেন- ‘সাম্প্রদায়িক মননের বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের সম্মোহনে আবিষ্ট হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে, লক্ষ লক্ষ মানুষ আত্মত্যাগ করে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু সময়ের কালচক্রে বাঙালির সেই মোহ কেটে গেলে বাংলাদেশের মানুষ আবারো যে পূর্বের পথ অনুসরণ করবে না, সেই আশঙ্কামুক্ত আমি হতে পারি না।’ মহানায়কের এই অভিব্যক্তির বাস্তবতা বঙ্গবন্ধু-উত্তর একটি লম্বা সময় যেমন আমরা প্রত্যক্ষ করে করেছি, তেমনি করে আজকের বাস্তবতায়ও বাংলাদেশের মানুষের বড়ো একটি অংশ সেই কুলাঙ্গার চরিত্র বারবার প্রদর্শন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। বারংবার মৃত্যুর পথযাত্রী হয়েও সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশীর্বাদে তিনি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একটানা চতুর্থবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।

পাহাড়সম প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছে পশ্চিমাবিশ্বের মোড়লদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতটাই ঈর্ষণীয় হয়েছেন যে, পশ্চিমা নেতৃত্ব তাঁকে আর কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না। ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের কাতারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই পৌঁছাতে না পারে, সেই লক্ষ্যে হেন কোনো ষড়যন্ত্র নেই, যা তারা করছে না। বাংলার আবহমান সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিলুপ্ত করার বিরাট ষড়যন্ত্রে ইতিমধ্যেই অনেক সফলতা অর্জন করেছে তারা। মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতদানের মধ্য দিয়ে ভয় ভীতি প্রদর্শন ও বোমাবাজি করে উন্মুক্ত বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকে রীতিমতো অবরুদ্ধ করে ফেলেছে তারা। একই সাথে, তথাকথিত মৌলবাদীদের আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে অর্থবিত্ত প্রদান করে। সর্বোপরি, তাদের এমন অপকর্মের পুরস্কার হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিতেও তারা পিছপা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতি এতটাই ঋদ্ধ যে, একমাত্র তা ধ্বংস করা সম্ভব হলেই বঙ্গবন্ধু আদর্শের আওয়ামী লীগ দর্শনের পতন ঘটবে এবং অপসংস্কৃতির বিজয়ের মধ্যে দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো সম্ভব হবে। অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫২ বছর পর্যন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোক দেখানো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও বাঙালি সংস্কৃতির প্রবৃদ্ধি ও বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা বিন্দু পরিমাণ কোনো অবদান রাখেনি। আমরাও দারিদ্র্য কাটিয়ে সুখী সমৃদ্ধশালী হবার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও তাদের প্রেসক্রিপশনে শুধুমাত্র উন্নয়নকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি, সেই তুলনায় নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিকশিত করে বিশ্বব্যাপী সৌরভ ছড়াবার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছি সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনে। এই ব্যবস্থার উন্নয়ন না করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে গুণগত মানে পরিবর্তন না করলে, এমনকি বাঙালি সংস্কৃতির সেই বিকাশমান ধারাকে বাধামুক্ত অবিরাম চলার সুযোগ করে দিতে না পারলে বাংলা সংস্কৃতি তথা বাঙালিজাতি তার পরিচয় সংকটে পতিত হয়ে বিলুপ্তিকেই অনিবার্য পরিণতি হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে পুনরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এবং সুদীর্ঘকাল পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাঁর নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। গর্জে ওঠা বিপরীত সংস্কৃতির জনসংখ্যার তুলনাচিত্রে ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারার বিকাশ ও সুরক্ষার প্রয়োজনে এখন থেকেই পৃথক সাংস্কৃতিক শিক্ষাব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা রক্ষায় সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এটা এখন সময়ের যৌক্তিক দাবি। কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, অভিনেতা ইত্যাদি শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকল মানুষের এই উপলব্ধিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার নিজের উপলব্ধির সাথে একাত্ম করে সার্বিক বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুস্থ্ চিন্তা ও চেতনাসম্পন্ন সৃষ্টিশীল একটি প্রজন্ম গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সমুন্নত করবেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চিরস্থায়ী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করবেন, সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে এটা আমাদের প্রাণের দাবি, এই দাবি আমাদের বাঁচার দাবি। সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমেই অবকাঠামোগত উন্নয়নের ইটপাথর সৃষ্টিশীলতার সৌরভে সুরভিত হোক।

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :