কীভাবে শিশু গ্রন্থমেলা থেকে হলো বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা

আহম্মেদ মুন্নী
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩১

মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মৃতিজড়িত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলা একাডেমি।

১৯৬৫ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি) প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে আজকের এই সাজ সাজ রব ছিল না তখন। বাংলা একাডেমিতে চাকরি করা এক বাঙালি বই প্রেমিকের আয়োজনে ছোট করে ‘শিশু গ্রন্থমেলা’ নামে বইমেলার আয়োজন করেছিলেন কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন। মনের আনন্দ আর আত্নতৃপ্তির জন্য এরপর আরো বড় আয়োজনে গ্রন্থমেলা করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি। সেসুযোগ হয়ে উঠে ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজনের মাধ্যমে। এই মেলায় আলোচনা সভারও ব্যবস্থা ছিল যাতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম।

সত্তুরের পর আর সুযোগ হয়নি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ক্ষতবিক্ষত বাংলার মাটিতে হানাদার বাহিনীর আঘাতের কারণে। তবে ১৯৭২ সালে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন বাংলা একাডেমির বাইরে।

তারপর সে পথে হাঁটেন আরও একজন। তিনি হলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে বটতলায় চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এ ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা। ওই সময় বর্ণমিছিলসহ আরও সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসেন।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবেই বইমেলা চলতে থাকে। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি মেলা উপলক্ষে ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমি প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স ও তাদের পাশাপাশি আরও কেউ কেউ বাংলা একাডেমির মাঠে নিজেদের বই বিক্রির উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি।

৭৯ সালের দিকে ৭ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৮১ সালে বইমেলার মেয়াদ ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। এরপর প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ আবার ২১ দিন করা হয়। মেলার উদ্যোক্তা বাংলা একাডেমি। সহযোগিতায় ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। মূলত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের করুণ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এই মেলার নামকরণ হয় 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা' যা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়।

তবে করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালের বইমেলা ১৮ এপ্রিল এবং ২০২২ সালে বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল। আর এবার রীতি মেনে চলতি বছরের ফেব্রয়ারির এক তারিখেই শুরু হতে যাচ্ছে বইমেলা। এবছরের বইমেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পড়ো বন্ধু গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

বর্তমানে বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও নিত্যনতুন অনেক বড়ও বড়ও ইভেন্ট। যেমন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, সব ধরনের বই বা প্রকাশনি সম্পর্কে জানতে থাকছে তথ্যকেন্দ্র যেখান থেকে পাওয়া যাবে নতুন বইয়ের খবর। মেলায় ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে থাকে বই নিয়ে লেখক-পাঠকের মতবিনিময়।

(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এএম/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :