ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপন এবং ২৪২ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি
![](/assets/news_photos/2024/02/01/image-341882.jpg)
যেকোনো বিজ্ঞাপন দেখলে তা প্রায়শই পাঠকদের মনে বিরক্তির উদ্রেগ করে! যদিও বিজ্ঞাপনই একটি পণ্য বাজারজাতকরণের অন্যতম উপায় হিসেবে সর্বত্র স্বীকৃত এবং সমাদৃত। মূলত বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যেই এইসব বিজ্ঞাপনের ব্যবহার হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনের অর্থদিয়েই বড়ো বড়ো কোম্পানি টিকে থাকে এবং সম্প্রসারিত হয়ে থাকে। তবে সব গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপনের জন্য সমান হারে খরচ হয় না। যে গণমাধ্যম যত জনপ্রিয় বা যে গণমাধ্যমের সার্কুলেশন যত বেশি তাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের খরচও তত বেশি। আবার বিজ্ঞাপনের আকার, প্রকার, রঙ প্রভৃতির উপরও বিজ্ঞাপনের খরচের হ্রাস বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
ওয়াশিংটন পোস্টের একটি সম্পূর্ণ ব্রডশিট পৃষ্ঠার আয়তন হচ্ছে ৬ কলাম গুণন ২১"। অনলাইন বাদে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত এই জগদ্বিখ্যাত দৈনিক সংবাদপত্রটির দৈনিক (ছাপা) সার্কুলেশন ২২৯৪৭৫ কপি। গুগলে ‘ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন দিতে কত খরচ হয়?’ অথবা ইংরেজিতে ‘হাউ ডাজ ইট কস্ট টু এডভার্টাইজ অন ওয়াশিংটন পোস্ট?’ লিখে সার্চ দেয়ার পর যে রেজাল্ট এসেছে তাতে যে কারও ‘চক্ষু চড়ক গাছ’ হতে পারে। দেখা যাচ্ছে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন একবার প্রকাশ করতে ৭৮৫০০/= মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ মার্কিন ডলার সমান হচ্ছে ৮৬,০০,০০৪.৭০ বাংলাদেশি টাকা। এক পৃষ্ঠার একটি মাত্র বিজ্ঞাপন ছাপাতে খরচ হয় প্রায় এককোটি বাংলাদেশি টাকা!
একটি মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য একজন নোবেল বিজয়ী বিশ^বরেণ্য ব্যক্তির জন্য এটি খুবই বেমানান! বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান এবং সম্মাননীয় নাগরিক নোবেল বিজয়ী ড. মহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ওকালতি করতে ২৪২ জন বিশ^বরেণ্য নেতা ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। এই ২৪২ জনই কি খরচের এই টাকাটা নিজেরা ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। না কি ড. ইউনূসের পক্ষে কেউ এই বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে দিয়েছেন!
সোমবার (২৯শে জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ) চিঠিতে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে একটি পূর্ণ-পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশিত হয়। এর আগে গত বছরের মার্চ ও আগস্ট মাসেও একই ধরনের দুটি চিঠি লিখেছিলেন তারা। প্রতিটি চিঠিতেই আগেরবারের তুলনায় বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন। বিজ্ঞাপন এবং একটি বিবৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটাকে বিবৃতি বলা যাবে না, এটা একটা বিজ্ঞাপন। ওয়াশিংটন পোস্টে কোটি টাকা খরচ করে ২৪২ জনের নামে একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের একজন প্রবীণ নাগরিক। যথাযথ সম্মানের সাথে বলতে হয় যে, বাংলাদেশে এমন বিজ্ঞাপনী বিবৃতি কখনো দেখা যায় নাই। প্রশ্ন হলো এটা কতটা যুক্তিসংগত। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এরকম একটা বিবৃতি প্রকাশ করা কতটা যুক্তিসংগত । ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী। এটা আসলে তার ব্যক্তিত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। পাশাপাশি এটিও একটি বড়ো প্রশ্ন যে, বিজ্ঞাপনের এত টাকা আসে কোথা থেকে? ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের অর্থ জোগানদাতা কে ? এক্ষেত্রে অর্থের জোগানদাতা রহস্যজনকই রয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনূস কর্তৃক অতীতে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগও তিনি শেষ পর্যন্ত বাদ দিয়েছিলেন। তবে কেনই-বা তিনি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন আর কেনই-বা শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে সরে এসেছিলেন তার সদুত্তর আজও পাওয়া যায়নি।
২০০৬ সালের প্রথম দিকে ড. ইউনূস, বাংলাদেশের কয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সুশীল সমাজের অন্য সদস্যদের সাথে জাতীয় নির্বাচনে সৎ ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থীদের প্রচারে অংশ নেন। ড. ইউনূস সেই বছরের শেষের দিকে রাজনীতিতে প্রবেশের কথা চিন্তা করেছিলেন। ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০০৭-এ, ইউনূস একটি খোলা চিঠি লেখেন, যা ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে তিনি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সঠিক নেতৃত্ব এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা সম্পর্কে নাগরিকদের মতামত চেয়েছিলেন। চিঠিতে, তিনি প্রত্যেককে সংক্ষিপ্তভাবে রূপরেখা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে কাজটি করতে হবে এবং কীভাবে তারা এতে অবদান রাখতে পারেন। ইউনূস অবশেষে ঘোষণা করেন যে, তিনি ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে অস্থায়ীভাবে নাগরিক শক্তি (নাগরিক শক্তি) নামে একটি রাজনৈতিক দল চালু করতে ইচ্ছুক। সেখানে জল্পনা ছিল যে, সেনাবাহিনী রাজনীতিতে ইউনূসের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছিল। তবে, ৩রা মে,২০০৭ তারিখে ড. ইউনূস ঘোষণা করেন যে, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সাথে বৈঠকের পর তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। রাজনীতির জন্য যেমন জনমত সংগ্রহের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি তার পক্ষে বিশ্বের প্রভাবশালীদের মতামত সংগ্রহের জন্য তিনি কোটি কোটি টাকা খরচে একটুও দ্বিধাবোধ করছেন না। তবে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এইসব অর্থের উৎস কী?
ড. ইউনূসের পক্ষে ২৪২ জন বিশ্বনেতার ওকালতি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্বনেতাদের নগ্ন হস্তক্ষেপ। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এই ২৪২ জনের মধ্যে যেসব আইন প্রণেতা আছেন তারা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গের জন্য অনুরোধ করছেন! বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও এটি একটি আঘাত। বিশেষ করে মার্কিন বিরোধী কোনো কথা বলা হলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে চাপে ফেলার জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্র। যা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের পক্ষে সাফাই গাইতে যেয়ে ২৪২ জন বিশ্বনেতা সংঘটিত করছেন!ড. অরুণ কুমার গোস্বামী: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ঢাকা।
সংবাদটি শেয়ার করুন
মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
মতামত এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360320.jpg)
সাংবাদিক হাসান মেহেদী হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360257.jpg)
সরকারকে নিজের ঘরের দিকেও তাকাতে হবে
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360090.jpg)
সীমাহীন মূল্যে কেনা হলো কোটা-সংস্কারের দাবিসমূহ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/18/resize-90x60x0image-359998.jpg)
সরকারি চাকরিতে কোটা-সংস্কার সময়েরই দাবি
![](/cache-images/news_photos/2024/07/17/resize-90x60x0image-359852.jpg)
কোটা ব্যবস্থার বিলোপ: পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্ক
![](/cache-images/news_photos/2024/07/16/resize-90x60x0image-359732-1721113634.jpg)
আন্দোলনকারীদের চোখে-মুখে ভয় আতঙ্ক জড়তা নেই
![](/cache-images/news_photos/2024/07/16/resize-90x60x0image-359730.jpg)
বসুন্ধরা পারলে কেন সিটি করপোরেশন পারবে না
![](/cache-images/news_photos/2024/07/16/resize-90x60x0image-359717.jpg)
শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্যদিয়েই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে
![](/cache-images/news_photos/2024/07/15/resize-90x60x0image-359595.jpg)
ট্রানজিট এবং বিএনপি’র ভারত বিরোধী কৌশল
![](/cache-images/news_photos/2024/07/14/resize-90x60x0image-359497.jpg)