রূপগঞ্জে মাদরাসার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পরিবার নিয়ে অবরুদ্ধ স্কুল শিক্ষক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চলাচলের রাস্তা বন্ধ থাকায় গত ১০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন এক স্কু শিক্ষক।
উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের চারিতালুক এলাকার দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনি।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দয়া করে লোহার গেটের তালা খুলে দিলে তিনি বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন। অন্যথায় রাত্রিযাপন করতে হয় বাইরে কোথাও। তবে এই নিয়ম শুধু রাতের বেলার জন্য নয়।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত মাদরাসা গেট বন্ধ থাকলে বাড়িতে আসা যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় তাদের। তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সময় কাটান তারা। আর অপেক্ষা করেন কখন ৪টা বাজবে আর মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দয়ার হাত প্রসারিত হবে। তারা তালা খুলে দিলেই কেবল মিলবে গৃহপ্রবেশের অনুমতি। এমনই অভিযোগ করেছেন স্কুল শিক্ষক মহসীন মিয়া ও তার পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ভোলাবোর চারিতালুক দারুল হুদা আলীম মাদরাসা ও এতিমখানাটি বহুপূর্বে প্রতিষ্ঠিত হলেও ৭০ এর দশকে ভোলাবো মৌজার উল্লিখিত জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। সে সময় জায়গাটি এলাকাবাসীর উন্মুক্ত খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ২০১৪ সালে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পূর্ব ও দক্ষিক অংশে পাকা বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণ করলে শুরু হয় এলাকার মানুষের ভোগান্তি। ওই এলাকার কৃষকরা মাদরাসার পশ্চিমে বপন করা ফসলাদি নিয়ে পাকা রাস্তায় উঠতে পারছিলেন না। তারা বহুপথ ঘুরে তাদের ফসল বাড়িতে আনতে হচ্ছে। তবে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ভোলাবো গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মহসিন মিয়া ও তার পরিবার। পরে তারা মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে বহু অনুনয় বিণয় করে ছোট একটা পকেট গেটের ব্যবস্থা করেন বাড়িতে যাতায়াতের জন্য।
শিক্ষক মহসিন মিয়া জানান, এমন মানবেতর জীবন অন্য কোনো মানুষের জীবনে আছে কি না আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন মানুষকেও ঘর করে দিচ্ছেন আর আমি একটু উন্মুক্ত রাস্তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ১০ বছর যাবত দৌড়াদৌড়ি করেও পাচ্ছি না।
মহসীন মিয়ার ছেলে আরিফ আহমেদ বলেন, মাদরাসাটি ভোলাবো মৌজায়, আর আমাদের বাড়িটি মোচারতালুক মৌজায়। দুই মৌজার মাঝখানে ১০ ফিট জায়গা আছে। যেটা দখল করে মাদরাসা দেয়াল তুলে ফেলেছে। এই ১০ ফিট দখল তারা ছেড়ে দিলে আমরা চলাচলের রাস্তা পাই। গত ১০ বছর নিজের বাড়িতে থেকেও মনে হচ্ছে আমরা জেলখানায় বসবাস করছি।
এদিকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ক্যামেরা দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শিক্ষকরা। অনুমতি ছাড়া মাদরাসায় প্রবেশ করার কৈফিয়ত চান তারা।
একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা ইকবাল হাছান বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই গেটে তালা দিয়ে রাখি। তবে মহসিন মিয়ার যাতায়াতের জন্য অনুমতি দেওয়া আছে।
মাদরাসার সভাপতি হাসান আশকারি মুঠোফোনে জানান, এখানে মাদরাসার ছাড়া অন্য কারো জমি আমার জানামতে নেই। তারপরও আমরা মহসিন মিয়ার চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া মহসিন মিয়ার চলাচলের জন্য আমরা একটা পকেট গেট রেখেছি। আমরা মাদরাসার উত্তর দিক দিয়ে কৃষকদের চলাচলের জন্য একটা রাস্তা করার পরিকল্পনা করছি। এতে মহসিন মিয়ার কি উপকার হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার উপকারের দায়িত্ব তো আমার নয়। সেটা সরকার দেখবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিমন সরকারের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এ ধরনের বিষয়ে আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)