উদ্বোধনের দুই সপ্তাহের মাথায় অকেজো, ইবিতে ৯ মাসেও সচল হয়নি সেই লিফট
প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৬ তলা ভবনে দুটি লিফট স্থাপন করা হলেও উদ্বোধনের দুই সপ্তাহের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় লিফটগুলো। এরপর ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সচল করা হয়নি লিফট দুটি।
একাডেমিক ভবনে অত্যন্ত নিম্নমানের ও কম ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন 'সি' ক্যাটাগরির লিফট স্থাপন এবং পরবর্তী সময়ে এগুলো অকেজো হয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সিঁড়ি দিয়ে উঠানামায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ অনুষদের শিক্ষকসহ প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, একাডেমিক ভবনের মধ্যে ব্যবসায় অনুষদ ভবন সর্বোচ্চ বহুতল ভবন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে গত বছর ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ ভবনে উদ্বোধন করা হয় লিফট দুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর মধ্যে এটিতেই প্রথম লিফট স্থাপন করা হয়। ভবনটির ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলার সম্প্রসারণের সময় ৪২ লাখ টাকা বাজেট ধরে লিফট দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু উদ্বোধনের দুই সপ্তাহের মাথায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ সচল অবস্থায় ওভারলোড ও টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বিভিন্ন সময় লিফটের ভেতর আটকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেও একদিন লিফটে আটকা পড়েছিলেন। পরে লিফটের দুইপাশ টেনে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওভারলোড কন্ট্রোল ও অটোমেটিক উদ্ধারের মত গুরুত্বপূর্ণ সেন্সর না থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, 'পিডব্লিওডি' শিডিউল অব রেটস-২০১৮ অনুযায়ী বাজারের সর্বনিম্ন তালিকাভুক্ত 'সি ক্যাটাগরির' লিফটের মূল্য তালিকায় রয়েছে স্থাপিত লিফট দুটি। 'সি' ক্যাটাগরির এলজিএস, গোল্ড স্টার, সিগমাসহ ৪টি ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করে লিফট বসানোর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরমধ্য থেকে সিগমা ব্র্যান্ডের কোরিয়ান দুটি লিফট গত ৩ মে স্থাপন করে সনেট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
উপচে পড়া ভিড় থাকা একাডেমিক ভবনে মাত্র ৬ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন 'সি' ক্যাটাগরির নিম্নমানের লিফট স্থাপন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, কোনো প্রয়োজনে ৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী উঠলে ওভারলোড সিগন্যাল না থাকায় ভেতর থেকে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত লিফটে অটোমেটিক রেস্কিউ সিস্টেম থাকার কথা থাকলেও নিম্নমানের এই লিফটগুলোতে কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের লিফটে আটকে পড়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ নুর বলেন, 'এ ভবনের একদম ষষ্ঠ তলায় আমাদের ক্লাসরুম। প্রতিনিয়ত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠানামা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিম্নমানের লিফট ক্রয় করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলেছেন। এ সমস্যার আশু সমাধান কামনা করছি, এতে আমিসহ এ অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে।'
অকেজো লিফট চালু করতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'প্রায় দুই মাস আগে আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল খুব শীঘ্রই লোকবল নিয়োগ করে লিফট চালু করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে কাজ শুরু করার জন্য বলা হলেও দুই মাসেও কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে প্রকৌশল অফিসের প্রধান প্রকৌশলী এ. কে. এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসায় প্রশাসন ভবনের লিফট চালু করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশনা এসেছিল। পরবর্তীতে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৌশল অফিস থেকে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকা.) মো. আব্দুল মালেক মিয়াকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। লিফটের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
প্রকৌশল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকা.) মো. আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, 'লিফট সংস্কার করে পুনরায় চালু করার বিষয়ে আমরা প্রশাসন থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছি এবং কাজও শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শুরু করার অন্যতম বাধা জনবল সংকট। লিফট পরিচালনার জন্য কমপক্ষে দুইজন লোক চেয়ে আমরা প্রশাসন বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। প্রশাসন এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। জনবল পেলেই আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করবো।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘লিফট সংস্কারের ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত হোসেন আজাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো জরুরি ফাইল। ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসলে দ্রুত কাজ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা আনেনি, এই কারণে আটকে আছে। যদি এটা নিয়ে কোনো আন্দোলন হতো তাহলে কিন্তু তারা নিজ দায়িত্বে ফাইল নিয়ে আসতো।'
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)