পুরান ঢাকায় সোহরাবের ‘লাইসেন্সেই’ চলছে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার, জানে পুলিশও

মেহেদী হাসান, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:২৪| আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৩৩
অ- অ+

রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নং ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। পাড়া মহল্লা, বেরিবাঁধ এমনকি প্রধান সড়কগুলোতেও প্রকাশ্যে চলছে এসব অটোরিকশা। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ ধরনের গাড়ি নির্মাণ আমদানি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধেরও নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্টের ওই আদেশে। কিন্তু নিষিদ্ধ হলেও রাজধানী হাজারীবাগ থেকে সেকশন ঢাল হয়ে কামরাঙ্গীরচর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত অলিগলিসহ প্রধান সড়কে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা। এসব চলছে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অধীনে। এদের নিয়ন্ত্রক স্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালীরা।

হাজারীবাগের বাসিন্দা সোহরাব নামের এক রিকশা চালক দিচ্ছেন অটোরিকশা চালানোর ছাড়পত্র। টাকার বিনিময়ে দিচ্ছেন বিশেষ কার্ড। এমনটি করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাম ভাঙ্গিয়ে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সোহরাব চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ হাজার রিকশা চালকের মাঝে কার্ড বিতরণ করেছেন। কার্ডে রয়েছে সোহরাবের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার। কার্ড প্রতি নিয়েছেন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। এসব কার্ড পরবর্তী পুনরায় রিনিউ করতে হবে সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে। এর সবটাই হচ্ছে সোহরাবের ইশারায়।

সম্প্রতি চাঁদাবাজির মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। জামিনে বের হয়েই পুনরায় শুরু করেন চাঁদাবাজি।

সোহরাব নিজেও একসময় রিকশা চালক ছিলেন। বিএনপি সরকারের আমলে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন নেতা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে চালু করেন কার্ড বাণিজ্য। রিকশা চালক থেকে সোহরাব বনে গেছেন বড় ব্যবসায়ী। চাঁদার টাকায় করেছেন আলিশান বাড়ি। এমনকি তার ৩টি বিয়ের তথ্যও এসেছে ঢাকা টাইমসের কাছে।

চালকরা জানান, সোহরাব নামের এক ব্যক্তির কাছে থেকে তাদের কার্ড নিতে হয়। পুলিশে ধরলে আম, কাঁঠাল, আনারস, আপেল, হরিনের ছবিযুক্ত এসব কার্ড দেখালেই অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে ছেড়ে দেন পুলিশ। একটি কার্ডের মূল্য ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা।

রিকশা চালকরা বলছেন, এই কার্ড দেখালে কোনো বাধা ছাড়াই রাস্তায় চলতে পারে এসব ‘অবৈধ যান’। আবার প্রতি মাসে তা রিনিউ করতে হয় সমপরিমাণ টাকা দিয়ে। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে পার্কিং, বেপরোয়া চলাচল এবং খারাপ আচরণ সবই করে বেপরোয়া এসব অটো চালকরা। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাও ঘটে।

রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার অলিগলিতে দিনকে দিন বেড়েই চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। রাজধানীর পুরান ঢাকা, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, মাদারটেক, নন্দীপাড়া, বাসাবো, মুগদা, কদমতলা, বৌদ্ধমন্দির, বনশ্রী এলাকায় এই হার সবচেয়ে বেশি। মূলত জনসাধারণের সহজ ও কম ভাড়ায় যাতায়াতে সুবিধা দিয়ে থাকে এ অবৈধ যানটি। এ কারণে জনসাধারণ বিরক্ত হলেও কিছু বলতে চায় না। বেআইনি যানটি পুলিশি বৈধতা নিয়ে টিকে আছে রাজধানীহ সারা দেশে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ২০ শতাংশই ঘটে ব্যাটারিচালিত রিকশায়। সারা দেশে দিনে অন্তত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পেছনে।

যেভাবে চলে এসব কার্ড বাণিজ্য: রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মুসা ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় সোহরাব নামের এক ব্যক্তিকে। বিনিময়ে রিকশায় লাগিয়ে দেওয়া হয় একটি মার্কাযুক্ত কার্ড। এ কার্ডের মেয়াদ এক মাস। কার্ড থাকলে পুলিশ তাদের কিছু বলে না। না থাকলে গাড়ি রেকারে দেয়। সেখান থেকে গাড়ি আনতে দুই-তিন হাজার টাকা লাগে।

আরেক অটোরিকশা চালক হাসান উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, সোরাভ ভাই প্রতিটি গ্যারেজের মালিকের কাছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি কার্ড দিয়ে এসব ব্যাটারি রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে। একেক কার্ডে একেকরকম সাংকেতিক চিহ্ন থাকে। যা থেকে বোঝা যায় এ রিকশা কোনো ব্যক্তির অধীনে। একেকটি গ্যারেজে সর্বনিম্ন ১০০টি ব্যাটারি রিকশা থাকলে প্রতি গ্যারেজ থেকে ৩ লাখ করে টাকা উঠে। আর ৭০টা গ্যারেজ থেকে যা উঠে তা দিয়ে তো হয়েই যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা ও থ্রি-হুইলার অটোরিকশা নিষিদ্ধ। ফাঁক-ফোকর দিয়ে চলাচল করে। সোহরাব নামের এক ব্যক্তি এসব কাজ করছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। আমার জানা মতে কোনো পুলিশ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত নয়। তবে প্রমাণ মিললে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দেশে কমপক্ষে ৩০ লাখ এমন পরিবহন চলছে। ২০১৬ সালের যার চিত্র ছিল ১০ লাখ। ব্যাটারিচালিত যানবাহনে দিনে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

যাত্রী রিয়াজ বেপারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা সবাই জানি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা অবৈধ। কিন্তু তাড়াতাড়ি যাতায়াতে এ পরিবহনটি আমাদের যাতায়াত খরচ কমায় তাই আমরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রিকশার গ্যারেজ মালিক বলেন, ‘আপনি রিপোর্ট করবেন, করেন কিন্তু কাল পুলিশ চাঁদাবাজির দায় নেবে না। তারা এই রিকশাগুলোকে বন্ধ করে দেবে। এতে কয়েক হাজার রিকশা চালকের রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। আবার রুট চালু করতে হলেও পুলিশকে বাড়তি টাকা দিতে হবে। কিন্তু সিন্ডিকেট কি বন্ধ হবে? এখানে কাঁচা টাকা। কোনো বিনিয়োগ নেই, অথচ মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সোহরাবকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/এমএইচ/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির আন্দোলনের মুখে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার
বাংলামোটরে এনসিপির জুলাই চিত্র প্রদর্শনীর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
তাড়াশে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়িছাড়ার অভিযোগ
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা