লংগদুতে বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর খ্যাত ‘মাটির ঘর’

বিপ্লব ইসলাম, লংগদু, রাংগামাটি
 | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩২

মাটির ঘরকে বলা হতো প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর। দেশের বিভিন্ন জেলায় এখনো কোথাও কোথাও ঐতিহ্যবাহী এই মাটির ঘর দেখা যায়। অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পার্বত্য অঞ্চলেও রয়েছে এই ঘরের প্রচলন।

রাংগামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতেও এক সময় মাটির ঘর দেখা যেতো ব্যাপক হারে। শীত-গরমে আরামদায়ক হওয়ায় ধনী-গরিব সবাই এ ঘর তৈরি করতো। কেউ কেউ দুই তলা মাটির ঘরও তৈরি করতেন।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে আধুনিক ও মনোরম কারুকার্য খচিত ইট ও টিনের তৈরি পাকা-আধাপাকা ঘরবাড়ির ব্যাপক বিস্তারে হারিয়ে যেতে বসছে গ্রামবাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য। অথচ এক সময় সুখ দুঃখের নিরাপদ আশ্রয় ছিলো প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর খ্যাত এই মাটির ঘর।

অতীতে মাটি দিয়ে বিশেষ উপায়ে ঘর নির্মাণ করা হতো। চালা হিসেবে এসব ঘরে খড়, ছন, ইকর, টিন এসব ব্যবহার করা হতো। কেউ কেউ চালা তৈরিতে বাঁশ অথবা ইট ব্যবহার করতেন। বাড়ির মালিক স্বহস্তে অথবা কারিগর দিয়ে সুন্দর সুন্দর মাটির ঘর তৈরি করতেন। মাটির ঘরের সঙ্গে মিশে আছে গ্রামবাংলার মানুষের নিবিড় সম্পর্ক, রয়েছে হারানো স্মৃতি, প্রিয় মানুষদের সুখ দুঃখের স্মৃতি, আবেগ আর অনুভূতি।

লংগদু উপজেলার বাইট্টা পাড়া, সোনাই এবং ইয়ারিংছড়িতে বর্তমানে প্রায় তিন শতাধিক মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশগুলোলোতে লেগেছে টিনের ছোঁয়া। খড়-ছনের বিপরীতে চালা নির্মাণে টিনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। দিন দিন আধুনিক ঘর নির্মাণের ফলে এই ঘরের সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু গ্রামীণ জনপদের মানুষজন বলছে এই ঘরের রয়েছে বিশেষ সুবিধা। যা এখন চাকচিক্যের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাটির ঘরের সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনাই এলাকার বাসিন্দা মো. শাহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই ঘরগুলো ইট, টিন ও কাঠের তৈরি ঘরের থেকেও বেশি আরামদায়ক এবং লাভ জনক। সাধারণত ইট দ্বারা সমপরিমাণ একটি গৃহ নির্মাণের ব্যয় প্রায় অনেক টাকা যা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। তাছাড়া টিন-কাঠের ঘর কয়েক বছর অন্তর অন্তর বিভিন্ন জিনিস পরিবর্তন করতে হয়। যা প্রায় বেশ ব্যায় বহুল।’

‘অন্যদিকে মাটির ঘরে সেটা করতে হয় না। বসবাসের জন্য এটি খুবই আরামদায়ক। এমনকি তা সকল ঋতুতেই। শীতের মৌসুমে মাটির ঘরে বেশ গরম অনুভত হয়। অন্যদিকে গরমের মৌসুমে মনে হয় যেন বসবাস করছি কোনো এক এয়ারকন্ডিশন রুমে।’

বাঙাগালিদের পাশাপাশি পাহাড়ের আনাচে-কানাচেও রয়েছে পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারক মাটির তৈরি এমন অসংখ্য ঘর। পাহাড়ি জনপদের লোকগুলোও বেশ আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করছে মাটির তৈরি গৃহের সুবিধা।

তবে সাম্প্রতিককালে লংগদুতে বিলুপ্তি পথে পা বাড়িয়েছে প্রাকৃতিক ফ্রিজ খ্যাত এই মাটির ঘর। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে টিনের চালা দিয়ে কিছু মাটির ঘর দেখা গেলেও বাঁশ, খড়ের ও শনের চালার সেই মাটির ঘরগুলো সংখ্যায় নগন্য হয়ে আসছে। আধুনিকতা আর শহরের প্রভাবে এসব ঘর বিলুপ্তির পথে।

লংগদু উপজেলায় বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিয়ত মাটির ঘরের স্থলে জায়গা করে নিচ্ছে ইট পাথরে নির্মিত আধুনিক বিলাসবহুল পাকা আধাপাকা বাড়ি। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের মানসিকতা ও ভাবধারার পরিবর্তন ঘটছে। ধনীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছেন খেটে-খাওয়া মানুষরাও। ফলে তারা এখন মাটির ঘর ভেঙে তৈরি করছেন দালান ঘর।

প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটরগুলো ভেঙে পাকা ঘর নির্মাণের এক কৃত্রিম প্রতিযোগিতা চলছে লংগদুর সর্বত্র। এক সময় মাটির ঘর নির্মাণের জন্য দক্ষ লোকদের ডাক পড়তো বিভিন্ন গ্রাম থেকে। এখন আর আগের মতো সেরকম ডাক পড়ে না। কারিগররা বলছেন, আগে সময় বের করা যেতো না, আর এখন সময় পড়ে থাকে কিন্তু কাজ থাকে না। সে জন্য ঘর নির্মাণের অনেক কারিগর এখন পেশা বদলে অন্য উপায়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :