বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

রাফিউল হুদা, হাবিপ্রবি
| আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৪ | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫০

ঈদ মানে আনন্দ , ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই দীর্ঘ ছুটি, অবসর সময়ের নেই কোনো ত্রুটি। ঈদ মানে বন্ধুদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠা, ঈদ মানেই হাজারো ব্যস্ততার মাঝে পরিবারকে একটু সময় দেয়া। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। আর সেই ঈদ নিয়ে সবার অধীর আগ্রহ, তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে একটু বেশিই। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে বছরের বেশিরভাগ সময়ই পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের থেকে দূরে অবস্থান করতে হয়। একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে হর-হামেশাই বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে না। এত ব্যস্ততার মাঝে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটি মেলে এই ঈদুল ফিতরেই। আর এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সময় কাটাতে বাড়ি ফিরে দূর-দূরান্তে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থী। তাদের ঈদ ভাবনা তুলে ধরেছেন ঢাকা টাইমসের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. রাফিউল হুদা—

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সিনথিয়া রহমান সানু বলেন, পরিবারের মায়া ছেড়ে বের হওয়া সন্তানেরা চাইলেও সহজে আর ফিরে যেতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করার পর আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি সেখানে সবকিছুর মাঝে অভাব শুধু পরিবারের। সারাদিনের ক্লাস, এ্যাসাইনমেন্ট, মিড, কুইজ, সংগঠন, আড্ডা, টিউশনির ভিড়ে পরিবারের কথা মনে পড়লেও বেশিক্ষণ মন খারাপ নিয়ে থাকা যায় না। চাইলেই ছুটে যেতে পারিনা পরিবারের কাছে। এই দূরত্ব কাটাতে ঈদের ছুটি আমাদের জন্য এক স্বর্গীয় সুখ। সকল ব্যস্ততা উপেক্ষা করে আমরা ফিরে আসি পরিবারের কাছে। পরিবারকে কাছে পাওয়া, তাদের ভালোবাসা, পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া, সব যেন স্বপ্নের মতো সুন্দর। শুরু হয় বাধ ভাঙ্গা উৎসব। মায়ের ভালোবাসা, বাবার স্নেহ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক সন্তানের মনে এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. সুমন আহম্মেদ বলেন, দেখতে দেখতে আরো একটি ঈদুল ফিতরের দ্বারপ্রান্তে আমরা। ছাত্রজীবনে স্কুল-কলেজে থাকাকালীন ঈদগুলোর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পরের ঈদগুলো যেন একটু ভিন্ন রকমের হয় । সারা বছরের মিড-টার্ম, ফাইনাল ও টিউশন থেকে কিছুটা মুক্ত হয়ে দীর্ঘ ছুটিতে আপন ঠিকানায় ফিরে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আমাদের পরিবারের প্রিয় মুখগুলো। ছুটির তারিখটা যেন তখন কিছুতেই শুরু হতে চায় না। মা-বাবা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য টিউশনের টাকা দিয়ে ঈদ উপহার নিয়ে যাওয়াতেও যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। যান্ত্রিক এই শহরের কোলাহল থেকে ক্ষণিকের জন্য মুক্তি নিয়ে নিজের গ্রামে ঈদ উদযাপন করা, পুরাতন বন্ধুদের সাথে আবার দেখা, স্কুলের ব্যাচের ইফতার মাহফিল, সব মিলিয়ে যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে যাই। অন্যান্য ছুটির চাইতে ঈদের ছুটি এমনেও অনেক ব্যতিক্রম হয়। অনার্স চলাকালে আমরা হয়তো সবচেয়ে বেশি মিস করি আমাদের পরিবারকে।

সবশেষে, সবাইকে একটা কথাই বলবো, "সুযোগ থাকলে অবশ্যই ঈদটা নিজের পরিবারে সাথে করার চেষ্টা করবেন।" সবার স্বপ্ন নিরাপদে বাড়ি ফিরুক সেই প্রত্যাশা রাখছি ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শামছ উদ্দীন মোস্তফা শাহরিয়ার বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দের পসরা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। যদিও ছোটবেলার মতো এখন আর ওতোটা আনন্দ হয় না। তারপরও আমরা যারা সারা বছর বাড়ির বাইরে থাকি, ঈদুল ফিতর তাদের জন্য মহা আনন্দের। দীর্ঘদিন পর পরিবারের কাছে যাওয়া,সময় দেওয়া, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা, ঘোরাঘুরি ঈদের আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ঈদে শুধু নিজেরা আনন্দ করলেই হবে না।আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, আমরা আমাদের পাড়া–প্রতিবেশী, আত্মীয় –স্বজনদের খোঁজ নেব, সবাই মিলে আনন্দ করবো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আফিয়া শাহানা বলেন, ঈদ নিয়ে ছোট বেলা থেকেই আমার মধ্যে অন্য ধরনের এক আনন্দ বিরাজ করতো। ঈদ আসলেই নীল আকাশে ঈদের বাঁকা চাঁদের হাসি দেখার অপেক্ষায় থাকতাম । অন্যদিকে নতুন জামা আর সালামি পাওয়ার অপেক্ষা সে যেনো এক অন্যরকমের আনন্দ।

আজকাল ঈদের মানে যেনো বদলে গেছে, এখন ঈদ মানেই যান্ত্রিক এই শহর থেকে বাড়ি ফেরার আনন্দ। রমজানের শুরু থেকেই কবে বাড়ি যাবো সেই অপেক্ষায় থাকি। সেই সাথে নিজের জামানো টাকা থেকে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করার মাঝে এক অন্যরকম আনন্দ কাজ করে । সবশেষে, আট-দশ ঘন্টা জার্নির পর আপনজনের হাসি মুখ দেখা যেনো এক ঐশ্বরিক সুখ। এই ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক হাজারো নীড়ে ফেরা মানুষের মাঝে । নীড়ে ফেরার আনন্দ কি, সেতো জানে অপেক্ষাকৃত প্রিয়মুখগুলো। সবার ঈদ হোক অনেক আনন্দের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. মাসুদ মন্ডল বলেন, ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে খুশি। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম রোজার সময় আর ইদের সময়টা। ছোট থেকেই আব্বু, আম্মুর সাথে এই মধুর সময়টা কাটানো হয়। হয়তো সৌভাগ্য বলা যেতে পারে আমি এবারো বাবা মার সাথেই এই সময় টা পার করছি। যেখানে ক্যাম্পাসের সকলে নিজের শেকড় থেকে দূরে কষ্ট করে যাচ্ছে আমি বাবা মার সাথেই আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এর মাঝেও ৫ দিন বাবা মা ছাড়া ইফতার আমার বন্ধু- ভাই আর জেলা সমিতির সাথে কাটিয়েছি। এ অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ক‍্যাম্পাসে সবাই একত্রিত হয়ে ইফতার করার তৃপ্তি অন‍‍্যরকম। তারপর দীর্ঘ ভ্রমণ করে বাড়ি ফেরা কষ্ট হলেও প্রশান্তি পাই যখন বাবা-মাকে অনেকদিন পর দেখতে পাই। "স্বপ্ন বাড়ি যাবে আমার" - গানটা হয়তো আমার জন্য প্রযোজ্য না। আমার স্বপ্ন তো বাড়িতেই! কিন্তু বাকি সবার বাড়ির প্রতি টান, বাসার বাহিরে ইফতার এসব দেখে অনেক কিছু বুঝতে শিখলাম। তাছাড়া ইদে সবার সাথে সাক্ষাৎ হয়, সবচেয়ে মজা ইদের দিন সকালে উঠে সবাইকে একসাথে নিয়ে ইদগাহ মাঠে নামাজ পড়তে যাওয়া। তারপর ইদের দিন বা ইদের পরের দিন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া অন‍্যরকম অনূভুতি। পরিশেষে ইদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি ঘরে ঘরে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বাসা থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ঈদের এবং শীতকালীন ছুটিতে বাড়ি যাওয়া হয়। প্রতিবছর ঈদে পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঈদ করার জন্য আগ্রহ নিয়ে থাকি। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ক্লাস পরীক্ষার পর ঈদের ছুটিতে বাসায় ঈদ করার অনুভূতি অন্যরকম। ঈদে আত্মীয়দের বাসায় যাব, বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করব। মাঠের নামাযে সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও কুলাকুলি করব। ঈদ যেমন একদিকে খুশি নিয়ে আসে অন্যদিকে নিজের গুনাহ মাফের এক বিরাট সুযোগ করে দেয়। একটি বিষয় উল্লেখ্য, ঈদের পবিত্রতা রক্ষায় ডিজে গান বাজানো, আতশবাজি, অসামাজিক পিকনিক, নৌকা ভ্রমণ এগুলো থেকে তরুণ তরুণীদের দূরে থাকতে হবে এবং কিশোরদের বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানোর ব্যাপারে সকল অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :