কোরআন ও রাসুলের সত্যতা এবং দয়াময়ের বান্দাদের গুণাবলি

মুফতি আরিফ মাহমুদ হাবিবী
| আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ | প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৪

প্রিয় পাঠক, আমরা সকলেই জানি, যত কারণে রমজান সম্মানিত হয়েছে তার অন্যতম হলো কোরআন নাজিল হওয়া। এ কোরআনের ব্যাপারে মুশরিকরা বিভিন্ন আপত্তি উত্থাপন করত। এর আয়াতসমূহ মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো। কিছু লোক একে পূর্ববর্তীদের কিসসা-কাহিনী আখ্যা দিত। অপর কিছু লোক একে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বানানো কিতাব বলতো। তারা বলতো, এক্ষেত্রে আহলে কিতাবরা তাকে সাহায্য করেছে। তৃতীয় দল বলতো, এটা সুস্পষ্ট জাদু।

কোরআনের আলোচনার পর সাহিবুল কোরআন তথা রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হঠকারী লোকেরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো। তাদের ধারণা ছিল, মানুষ কখনো নবী হতে পারে না। নবী হতে পারে কেবল ফেরেশতারাই। আর মানুষকে কখনো নবী বানানো হলেও কোনো দরিদ্র এতিমকে নবী বানানো হতো না; বরং ধনাঢ্য ও নেতৃস্থানীয় লোকেরাই নবী হতে পারে। (৭-৯)

আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে তাদের ভ্রান্ত আপত্তি খণ্ডন করেছেন। ঊনিশতম পারার শুরুতেও মুশরিকদের দাবি এবং বিভিন্ন আপত্তি খণ্ডন করা হয়েছে। উদাহরণত তারা বলেছিল, আমাদের ওপর কেন ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হয় না? আমরা কেন আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পারি না? (২১)

এর উত্তরে বলা হয়েছে, ফেরেশতা যখন রুহ কবজ করার জন্য আসবে তখনই কেবল তাদেরকে দেখতে পাবে। আর যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন এটা কোনো সুসংবাদ বয়ে আনবে না। যেহেতু আমল কবুল হওয়ার মৌলিক শর্ত ঈমানই তাদের নেই। এ কারণে কেয়ামতের দিন তাদের কোনো আমলই তাদের কাজে আসবে না। সব ছাই হয়ে যাবে। সেদিনটি তাদের জন্য অত্যন্ত পেরেশানির দিন হবে। আক্ষেপবশত তারা হাত কামড়াতে থাকবে। আর বলতে থাকবে, হায়, যদি আমরা নবীদের রাস্তা অনুসরণ করতাম! সেদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার সম্প্রদায় এ কোরআন পরিত্যাগ করেছিল।’

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, কোরআন পরিত্যাগের বিষয়টি কয়েকভাবে হতে পারে। এক. কোরআন না শোনা এবং তার ওপর ঈমান না আনা। দুই. কোরআন তেলাওয়াত করা, তার উপর ঈমান আনা। কিন্তু তার ওপর আমল না করা। তিন. বিবাদ-বিসংবাদে কোরআনকে ফয়সালাকারী না মানা। চার. কোরআনের অর্থ নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা না করা। পাঁচ. কোরআন দিয়ে অন্তরের রোগ দূর না করা।

একটু থামুন, একটু ভাবুন

প্রিয় পাঠক, এখানে একটু থামুন। একটু চিন্তা করুন। নিজের ব্যাপারে এবং গোটা জাতির ব্যাপারে একটু ভাবুন। আমরা কীভাবে কোরআন পরিত্যাগ করে বসে আছি! আজ আমরা বহু আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক ব্যাধিতে আক্রান্ত; অথচ আমরা তার সুনিশ্চিত প্রতিষেধক ঐশী ওষুধ গ্রহণ করি না। ফলে প্রতিনিয়ত আমাদের রোগ-ব্যধি বেড়েই চলেছে। ক্রমেই আমরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছি।

মুশরিকরা এই আপত্তিও করত যে, তাওরাত-ইনজিল যেভাবে একত্রে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআন কেন সেভাবে একসঙ্গে অবতীর্ণ করা হলো না? বলাবাহুল্য, অল্প অল্প করে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার বহু হেকমত রয়েছে। উদাহরণত, তা মুখস্থ করা, তার অর্থ বোঝা, বিধান আয়ত্ত করা, সহজে আমল করা প্রভৃতি।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এখানে শুধু একটি হেকমতের কথা উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ করার ফলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তর প্রতিনিয়ত কোরআনের নূর দ্বারা আলোকিত হয়ে থাকে। কোরআনের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে তার রুহ-অন্তর শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আমরা অনেকেই জানি যে, হঠাৎ প্রবল বর্ষণ হলে খেত-খামার ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে উপযোগী সময়ে বৃষ্টি হলে এতে অনেক উপকার হয়।

এসব আপত্তির পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শান্তনা দেওয়ার জন্য হজরত মুসা, হারুন, নুহ, হুদ ও হজরত সালেহ আলাইহিমুস সালামের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা ও একত্ববাদের দলিল উল্লেখ করা হয়েছে। (৪৫-৪৯)

রহমানের বান্দাদের গুণাবলি

এই সুরার শেষে ইবাদুর রহমান তথা রহমানের বান্দাদের গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে।

এক. বিনয় (ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করা)। দুই. মুর্খদের সঙ্গে তর্কে না জড়ানো। তিন. রাতে নামাজ ও ইবাদত করা। চার. জাহান্নামের শাস্তির ভয় (আল্লাহর কাছে তা থেকে মুক্তির দোয়া করে। পাঁচ. খরচের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন। অর্থাৎ অপচয় না করা আবার কার্পণ্যও না করা। ছয়. শিরক থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা। সাত. অন্যায়ভাবে হত্যা না করা। নয়. ব্যভিচার ও অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকা। দশ. মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। একারো. গান-বাজনা ও গুনাহের মজলিসে না যাওয়া। বারো. আল্লাহর কিতাব দ্বারা প্রভাবিত হওয়া। তার দ্বারা উপকৃত হওয়া। তের. আল্লাহর কাছে চক্ষু শীতল করে এমন উত্তম স্ত্রী-সন্তানের জন্য দোয়া করা। এই দোয়া করা যে, হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন (৬৩-৭৪)

প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, দয়াময় আল্লাহ তায়ালা যেন স্বীয় অনুগ্রহে উল্লিখিত গুণগুলো আমাদেরকে দান করেন। আমরাও যাতে ইবাদুর রহমানের কাতারে শামিল হতে পারি। আমিন, ছুম্মা আমিন।

লেখক: আলেম ও ওয়ায়েজ; খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মিরপুর-০১।

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/এসআইএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :