রায়গঞ্জে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করল থানা পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২৪, ১৫:২৫

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে গত বছর নদীতে ভেসে আসে মো. শাকিল নামে এক অটোরিকশা চালকের লাশ। ক্লুলেস ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে রায়গঞ্জ থানা পুলিশ। হত্যায় জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি আশিক (১৯)।

মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রায়গঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিনয় কুমার।

এ ঘটনায় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি আশিকে গ্রেপ্তার করে রায়গঞ্জ থানা পুলিশ। আশিক বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নাকুয়া গ্রামের মো. বাদশার ছেলে।

খুন হওয়া অটোরিকশা চালক মো. শাকিল একই উপজেলার লাঙ্গলমোড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।

সার্কেল এসপি বিনয় কুমার বলেন, ‘শাকিল অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত বছরের ২১ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ার জন্য বের হন। সেসময় হিন্দু ধর্মালম্বীদের দুর্গাপূজা চলছিল। এ সময় শেরপুর থানার ৯নং সীমাবাড়ি ইউনিয়নের বগুড়া বাজার এলাকা হইতে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন তার অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন এলাকার দুর্গাপূজার মন্ডপ ঘুরবে মর্মে ভাড়া করেন। কিন্তু অজ্ঞাতনামা ওই আসামিরা শাকিলকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দিয়ে তার অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘শাকিলকে অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে তার বাবা বগুড়া জেলার শেরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর ২৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে রায়গঞ্জ থানার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের চান্দাইকোনা পূর্বপাড়া এলাকার মো. নজর আলীর বাড়ির পাশের ফুলজোড় নদীতে শাকিলের লাশ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে তখন রায়গঞ্জ থানায় একটি অজ্ঞাত হত্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং মো. ফিরোজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তবে ফিরোজ সে সময়ে বিষয়টি অস্বীকার করে।’

বিনয় কুমার বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই ক্লুলেস হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছিল। এরইমধ্যে তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় মামলার তদন্তকারী অফিসার আব্দুল মজিদসহ সঙ্গীয় অফিসার র্ফোস ঢাকার মধ্য বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত রবিবার পলাতক আসামি আশিককে গ্রেপ্তার করে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আশিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং বিজ্ঞ আদালতে গিয়ে দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামি আশিক তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, মো. ফিরোজ ও মোমিনসহ আশিকের অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন তারা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা চান্দাইকোনা বাজারে দুর্গাপূজা দেখতে গিয়ে ভিকটিম শাকিলের অটোরিকশাটি মথুরাপুর বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করে। মথুরাপুর বাজারে গিয়ে আসামি আশিক একটি কোল্ডড্রিংস ক্রয় করে এবং কোল্ডড্রিংসের অর্ধেক অংশ আগে আসামিরা নিজেরা খায়, বাকি অংশের ভেতরে আসামি মোমিন চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে অটোরিকশা চালক শাকিলকে খাওয়ায়।’

বিনয় কুমার জানান, ‘ক্লোডড্রিংস খাওয়ার পর শাকিলের চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসলে শাকিলকে পেছনের ছিটে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে বসিয়ে দেন তারা। এরপর ফিরোজ নিজে গাড়ি চালায়। ফুলজোড় নদীর পাড়ে গিয়ে ফিরোজ, আশিক ও মোমিন মিলে ভিকটিম শাকিলের হাত, পা ও মুখে গামছা বেঁধে ফুলজোড় নদীর পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর আসামিরা শাকিলের লাশ গুম করার উদ্দেশে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে মোমিনের বাড়িতে চলে যান তারা।’

পরেরদিন অটোরিকশাটির রং পরিবর্তন করে আসামি মোমিন তার এক নিকটাত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দেন। অটোরিকশাটি বিক্রয়ের টাকা আসামিরা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেন। এই ঘটনায় সেই সময়ে রায়গঞ্জ থানা পুলিশ আসামি ফিরোজকে আটক করলে আসামি আশিক ও মোমিন পালিয়ে ঢাকা চলে যান।’

আসামি আশিকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচণ হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/০১মে/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :