সুন্দরবনের আগুন নেভানোর কাজ যেভাবে চলে

বাগেরহাট (খুলনা) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ১৯:২১ | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০২৪, ১৮:১২

তীব্র দাবদাহের মধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের ভেতরে লাগা আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় যে কোনো সময় আগুন আবার জ্বলে ওঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আগুন লাগার ১৫ ঘণ্টা পর রবিবার সকাল থেকে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট।

একইসঙ্গে অগ্নিনির্বাপনে যোগ দেয় কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও টহল শুরু করে অগ্নিকাণ্ডের পুরো এলাকা।

মুহূর্তে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে থাকা ভোলা নদী থেকে পাইপ দিয়ে পানি টেনে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আগুনের স্তুপের চারপাশের শুকনো পাতা সরিয়ে ড্রেন কেটে দেওয়া হয়, যাতে ওই অংশের আগুন আর না ছড়ায়।

এদিকে এই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বনবিভাগের এই কমিটিতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন অফিসার মো. রবিউল ইসলাম। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস সুন্দরবনে প্রবেশ করলেও পানি সংকটসহ নানা কারণে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেনি। এক পর্যায়ে রবিবার সকাল থেকে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট।

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে পানির উৎস দুরে থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে চরম সমস্যা হওয়ায় নৌ বাহিনী ও কোস্ট গার্ড নদীপথে তাদের জাহাজ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করতে সুন্দরবনে এসে পৌঁছে।

ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সাইদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাগেরহাট ও খুলনার পাঁচ ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে। সুন্দরবনের ভোলা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভাচ্ছে। আগুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে জ্বলছে। এই আগুন নেভাতে সময় লাগবে।’

শনিবার বিকালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা নামক এলাকায় এ বনের গহীনে আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে বনবিভাগ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ায় এবং পানির উৎস দূরে থাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ফিরে যান এবং রবিবার সকালে আগুন নেভানোর কাজ শুরুর কথা জানানো হয় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, ‘বন রক্ষায় দায়িত্বরত বনরক্ষীদের উদাসীনতায় প্রথমদিন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে না পারলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রবিবার সকাল থেকে ব্যাপক আয়োজনে এবং ফায়ার লেন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে।’

স্থানীয় নিশান বাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনের লতিফের ছিলা এলাকার অনেক জায়গা জুড়ে আগুন লেগেছে। বনের মাটিতে পড়ে থাকা বিভিন্ন গাছের পাতার স্তুপের মধ্যে আগুন জ্বলছে। অন্তত ৫০টি জায়গায় আগুন দৃশ্যমান হয়েছে।’

আগুন নেভাতে যাওয়া বন বিভাগের কমিউনিটি প্যাট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য মণিময় মণ্ডল বলেন, ‘আগুন যাতে নতুন এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে আমরা শুকনো গাছ অপসারণ করেছি। বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ড্রেন কেটে রেখেছি।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গাজী নুরুল করিম রবিবার সকালে জানান, ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতার জন্য কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও যোগ দিয়েছেন। বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বন এলাকায় টহল দিচ্ছে। স্থানীয় দুই শতাধিক সাধারণ মানুষও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ তদারকি করছেন। এ ছাড়াও মোরেলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান, মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান আগুন নিয়ন্ত্রণে তদারকি করছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :