কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা: যা আছে এজাহারে

রাজধানীর শাহবাগে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা, পুলিশের জলকামান ও এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ভাঙচুরসহ একাধিক অভিযোগে কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে শাহবাগ থানায় এই মামলা করে। এতে আসামি অজ্ঞাতনামা অনেক সংখ্যক।
মামলার এজাহারে শাহবাগ থানা পুলিশের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি শাহবাগে কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি উপলক্ষে এপিসি-২৫ নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন। এসময় তার আরেক সঙ্গী ওয়াটার ক্যানন (জলকামান) নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অজ্ঞাতনামা ছাত্ররা জড়ো হয়ে বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে বিকাল চারটা ৪০ মিনিটে স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে বেআইনি জনতায় আবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করতে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। তারা শাহবাগ মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে সাধারণ জখম করে। তারপর তারা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সিনিয়র স্যাররা ছাত্রদের বুঝিয়ে পুনরায় শাহবাগ মোড়ে ফিরিয়ে আনে। আসার সময় বিএসএমএমইউ-এর পাশে নিরাপদ স্থানে রাখা এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যাননের চারদিকে ঘেরাও করে অনেক সংখ্যক আন্দোলনকারী; তারা এতে উঠে উদ্দাম নৃত্য শুরু করে। ওয়াটার ক্যানন চালককে গাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা ও গতিরোধ করে। যার ফলে এপিসি ২৫ এর সামনের দুটি এসএস স্ট্যান্ড, বনেটের ওপরে বাম পাশে রেডিও অ্যান্টিনা এবং ডান পাশের পেছনের চাকার মাডগার্ড এবং ওয়াটার ক্যাননের বাম পাশের লুকিং গ্লাস ভেঙে ফেলে। যার কারণে অনুমান ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।’
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ‘ছাত্রদেরকে অন্যান্য সিনিয়ররা বুঝিয়ে-শুনিয়ে এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যানন থেকে নামিয়ে আনেন এবং পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল, টেপটেনিস বল ও ইটের টুকরা ছুড়ে মারে। যাতে অনেক পুলিশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। উপস্থিত সব সিনিয়র স্যাররা ও পুলিশ সদস্যরা ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাতনামা ছাত্ররা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে শাহবাগের আন্দোলনে যোগদান করে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বারডেম হাসপাতালের গেটের ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশকে আহত করে এবং বিভিন্নস্থানে দৌড়াদৌড়ি করে। সেখানে অবস্থান নেওয়া পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কটূক্তি করতে থাকে আন্দোলনকারীরা। ছাত্ররা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা এবং শাহবাগ থানায় ছাত্রদের ধরে নিয়ে গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে। পুলিশকে মারার জন্য তেড়ে আসে ও পুলিশকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে শাহবাগ মোড় ত্যাগ করে। অজ্ঞাত আসামিরা বেআইনি সেখানে জড়ো হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান, স্বেচ্ছায় আঘাতদান, গতিরোধ, দাঙ্গা দমনকারী কর্তব্যরতদের প্রতি আক্রমন ও বাধা প্রদান ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি প্রদান করে। যা পেনাল কোড ১৪৩/১৪৭/১৪৯/১৫২/৩৪১/৩২৩/৩৩২/৩৫৩/৪২৭/৫০৬ ধারায় অপরাধ করেছে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে থানায় এজাহার দায়ের করা হলো।’
গত ৫ জুন উচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করেন। সেখানে পুলিশের জলকামান ও এপিসি সরিয়ে নিজেরা রাস্তা দখল করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে রাতে নতুন কর্মসূচি দিয়ে সড়ক ছাড়েন।
(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসএস/ইএস)

মন্তব্য করুন