আ.লীগ সরকারের পতন: সিদ্ধিরগঞ্জে উধাও বিতর্কিত নেতারা

​​​​​​​মো. আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি,
 | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৫৪

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতাকে পুঁজি করে দাপটের সঙ্গে চষে বেড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের বিতর্কিত কিছু নেতাকর্মী। তারা জিম্মি করে রেখেছিলেন স্থানীয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ উধাও হয়েছেন তারা। সোমবার ( আগস্ট) বিকালের পর থেকে তাদের কাউকে আর দেখা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার ( আগস্ট) ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে হদিস মিলছে না সিদ্ধিরগঞ্জের বিতর্কিত কিছু আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতার। বিতর্কিত কিছু কর্মীও আত্মগোপনে চলে গেছেন।

স্থানীয়দের ধারণা তারা ঢাকার বাইরে কোথাও পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ইমিগ্রেশনে কড়া নজরদারির কারণে তারা দেশ ত্যাগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজধানী ঘেঁষা সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় আদমজী ইপিজেডসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থাকায় এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এতদিন উপজেলা স্থানীয়দের কাছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত ছিল।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পূর্বে উপজেলার মূল দল সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন হয়েছিল। পরবর্তীতে দীর্ঘ দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও কমিটির পরিবর্তন হয়নি। ফলে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির পদে থাকাদের মধ্যকার কয়েকজন আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। বানিয়েছেন অঢেল সম্পদও। নানা কারণে আলোচিত সমালোচিতও ছিলেন তারা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ ২১ বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন হাজী ইয়াছিন মিয়া। বিতর্ক এই নেতা আলোচিত খুনের তিন নম্বর আসামি ছিলেন। পরবর্তীতে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পান। এরপর তিনি একটি সিএনজি পাম্পের মালিকসহ এলাকায় বেশ কিছু জমির মালিক বনে যান। তবে, তিনি তেমন অর্থ বিত্তের মালিক না হলেও তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ছোট ভাই আবুল হোসেন এবং ভাগিনা রহমত উল্লাহসহ কয়েকজন অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সোমবারের পর থেকে ইয়াছিন মিয়ার সঙ্গে তারাও পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।

থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাজিম বাবুও এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ২০০৪ সালে তাকে মাস মেয়াদি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল। এই নেতা সিদ্ধিরগঞ্জের সবচেয়ে বিতর্কিত নেতা হিসেবে পরিচিত। জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে উত্থান হয় তার। সিদ্ধিরগঞ্জে খুনের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন ২০১৪ সালে দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর কপাল খোলে মতির। ২০১৪ সাল থেকে তার বাহিনী দ্বারা পুরো আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, তেলের ডিপো, সাত ঘড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ওরিয়ন কোম্পানির চাঁদা জমিজমার দখল বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তথ্যমতে, আদমজী ইপিজেডের ১৪টির বেশি ফ্যাক্টরিতে তার একক ব্যবসা রয়েছে। গেলো জাতীয় নির্বাচনের আগে সম্পদের পরিমাণে গরমিল পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। তথ্যমতে ক্ষমতার পরিবর্তনের দিন তিনি তার বসতবাড়ি সংলগ্ন সাতঘোড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ভেতর দিয়ে পালিয়ে যান।

পালিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারারা। ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলকে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছিল। এরপর থেকে আর কমিটির পরিবর্তন হয়নি। তিনি তিনবারের টানা কাউন্সিলর এবং সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে এলাকায় জমি দখল, মহাসড়কের শিমরাইল অংশে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের নায়ক ছিলেন। তথ্যমতে সানারপাড় এলাকায় ভূমিদস্যু সাজু এবং তিনি মিলে জনসাধারণের কয়েক একর জমি দখল করে রেখেছেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তিনিও এখন এলাকা ছাড়া।

৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রিপন সরকারের পদত্যাগের পরপরই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ নেতা (নাসিক) নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল রুহুল আমিন মোল্লা। তিনি তার রাজনীনৈতিক জীবনে দেশের থেকে বিদেশে অর্থাৎ তার স্ত্রীর জন্মস্থান সিঙ্গাপুরে বেশি সম্পদ করেছে বলে জানা গেছে। তিনিও দেশ ত্যাগ করেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।

শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন। তিনি ২০১৫ সালে মতির সহযোগী হিসেবে যোগ দেন আর তখন থেকেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। একক ক্ষমতার জোর দেখিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে গড়েছেন বিশাল সম্পদ। তার তেলের ডিপো, রেস্তোরাঁ সেলুনসহ নানা রকম ব্যবসার খবর পাওয়া গেছে। অন্যদের সঙ্গে তিনিও এলাকা ছাড়া।

যুবলীগ নামধারী নেতা মানিক মাস্টার। কাউন্সিলর মতির ম্যানেজার হিসেবে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। একসময়কার লজিং মাস্টার মানিকের রয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট আলিসান ভবন, আদমজী ইপিজেডের -৪টি ফ্যাক্টরিতে রয়েছে একক ব্যবসা। এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন তিনিও।

৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তার ওরফে পানি আক্তার। যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির নাতনি জামাই হবার পর থেকে তার রাজত্ব শুরু। একসময় ভ্যানে করে পানি সাপ্লাই দেওয়া আক্তার আদমজী ইপিজেডের চিহ্নিত দখলবাজ হিসেবে পরিচিত তিনি। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর বিলাসবহুল বাড়ি, ইপিজেডের ব্যবসা, ডিশ ওয়াইফাই দোকানপাট রেখে তিনিও এলাকা ছেড়েছেন।

সেচ্ছাসেবক লীগের বিতর্কিত নেতা শফিকুল ইসলাম শফি। কোনো পদ না থাকলেও দলের নাম ব্যবহার করে দখল বাণিজ্য চাঁদাবাজির বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি নিজেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মী পরিচিত দিতেন। এখন এলাকা ছাড়া।

মানিক সরকার ওরফে ভাত মানিক, যুবলীগ নামধারী বিতর্কিত নেতা নিজেকে ইয়াছিন হাজীর কর্মী পরিচয় দিয়ে আদমজী ইপিজেডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছিলেন।

এছাড়াও আরও বহু নেতাকে খুঁজে পাচ্ছে না এলাকাবাসী।

ক্ষমতার পরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়সহ বিভিন্ন বাসাবাড়ি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা।

ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/পিএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সভা ভন্ডুল

বগুড়ায় আ.লীগ নেতাকর্মী ও সাংবাদিকসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

যোগদান করেই আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিলেন চাঁদপুরের ডিসি

সোনারগাঁয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুস 

লক্ষ্মীপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীর ওপর হামলার অভিযোগ 

বাগমারার আলোচিত সাবেক এমপি এনামুল গ্রেপ্তার

জেলখানার ভাইদের কথা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি: সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল 

সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন, ভেসে গেছে হাজারও মৎস্য ঘের 

সদরপুরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আলোচনা সভা  

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :