নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৩২
অ- অ+

নোয়াখালীর আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌরসভার বন্যা পরিস্থিতি প্রতিদিনই অবনতির দিকে যাচ্ছে। একদিকে ফেনী থেকে নেমে আসছে বন্যার পানি অন্যদিকে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে পানি বেড়েই চলছে সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার প্রতিটি এলাকায়। সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও কিছুটা পানি বেড়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।

বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে এলাকা ভেদে পানি বেড়েছে ৫ ইঞ্চি থেকে প্রায় ১ ফুট করে। মঙ্গলবার রাত ৩টা থেকে বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭২ মিলিমিটার।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলায় রৌদ্রজ্বল পরিবেশ থাকার পর রাত ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল না। এসময় বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫-৬ ইঞ্চি করে পানি নেমে যায়। কিন্তু রাত ৩টার পর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভারী বর্ষণে আবারও বাড়তে থাকে পানি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্যা কবলিত উঁচু এলাকায় আগের চেয়ে আরও ৫-৬ ইঞ্চি ও নিচু এলাকায় প্রায় ১ ফুট পানি বেড়েছে। বুধবার দুপুর থেকেও রৌদ্রজ্বল পরিবেশ বিরাজ করছে। শেষ রাতে আবার কী ঘটে তা নিয়ে চিন্তিত বন্যা কবলিত লোকজন। এখনও প্রত্যন্ত এলাকায় পানিবন্দি হয়ে আছে ১৯ লাখের বেশি মানুষ। জেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদ্য-ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া যাতায়ত ব্যবস্থা না থাকায় দূর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলা যে পরিমাণ খাল দখল হয়েছে সেগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। যে খালগুলো কিছুটা দখল মুক্ত আছে তার বেশির ভাগ ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। দখলকৃত খালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও বাকি খালগুলো পরিষ্কার করা হলে বর্তমানে যে বন্যার পানি সেগুলো দ্রুত নেমে যাবে এবং আগামীতে এমন পরিস্থিতির আর তৈরি হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। এদিকে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন, সেনাবাহিনী, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চরএলাহী রিকশা ওয়ালার দোকান এলাকায় খালের মাঝখানে দেওয়া একটি বাঁধের একটি অংশ কেটে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। যা দিয়ে বন্যার কিছু পানি নামা শুরু করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী জানান, নোয়াখালী খালের মুখে বাধা পাওয়ায় ওই খালটির একটি অংশ কাটা হয়েছে। সেটি সম্পূর্ণভাবে কাটতে হলে অনেকগুলো বেকু মেশিনের প্রয়োজন হবে যা অনেক সময়ের কাজ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৬৮ জন ও সাপে কাটার রোগী আছেন ২৫ জন। এছাড়া জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৯৩ জন ডায়রিয়া রোগী। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সার্বিক) শারমিন আরা জানান, বন্যায় কবলিত লোকজনকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলার এক হাজার ৩০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। ৫৯৩ মেট্রিকটন চাল মজুদ থাকলেও নগদ অর্থ, শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য কোনো মজুদ নেই।

(ঢাকা টাইমস/২৮আগস্ট/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা