সেবাপ্রার্থী প্রবাসীদের পদে পদে হয়রানি, ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসে বেপরোয়া ‘মৌসুমি সিন্ডিকেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৭ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৯

বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাস বা মিশন থেকে নানা সেবা নিতে হয় প্রবাসীদের। তবে ওমানে থাকা প্রবাসীদের এমন সেবা পাওয়া দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির প্রবাসী বাংলাদেশিরা অসহায় মাস্কাট মিশনের উপপ্রধান ও মিনিস্টার মৌসুমি রহমান সিন্ডিকেটের কাছে। এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে প্রবাসীরা কাঙ্ক্ষিত কোনো সেবা পাচ্ছে না। এর ফলে তারা রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের অসৎ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন।

বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশি নাগরিকরা কাজ করতে যান তাদের মধ্যে অন্যতম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান। দেশটিতে থাকা প্রবাসীদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ, তারা দূতাবাস থেকে ন্যূনতম সেবা বা সহায়তাটুকু পাচ্ছেন না। উল্টো পদে পদে কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু সেবাপ্রার্থী প্রবাসীরাই নন, মৌসুমি রহমান সিন্ডিকেটের কাছে দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীও কোণঠাসা। দলাদলি আর অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নিয়েই তাদের যত ব্যস্ততা। এর ফলে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ দূতাবাসের অভ্যন্তর থেকেই।

দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ২৪তম বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের কর্মকর্তা মৌসুমি রহমান বর্তমানে মিনিস্টার ও মিশন উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত। তিনি নিজেকে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী থাকার পরিচয় দেন। এই পরিচয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দূতাবাসে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গড়েছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

মিশন উপপ্রধান মৌসুমি রহমানের এই সিন্ডিকেটে রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, দুতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি থোয়িং এ সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি সিন্ডিকেটে খোদ রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামেরও যোগসূত্রতা থাকার অভিযোগ রয়েছে।

দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেট এখনো দূতাবাসে একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ দলীয় নয়, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন অজুহাতে কোণঠাসা করে রাখা ও দূতাবাসের সেবা কার্যক্রম প্রদানে সহায়তা না করা, এমনকি বাধা প্রদান করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

মৌসুমি রহমান সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্মে যথাসময়ে দূতাবাসের জরুরি সেবা পান না প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের এমন কর্মকাণ্ডকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।

ওমানে থাকা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশিরা আলাপকালে জানান, ওমান সরকারের সঙ্গে দ্বি- পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করার পরিবর্তে আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই ছিল এই সিন্ডিকেটের কাজ। তারা দূতাবাসকে রীতিমতো আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে।

সুত্র জানায়, মৌসুমি রহমানের আচার-আচরণ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পাকিস্তানে বাংলাদেশ দুতাবাসে কর্মরত থাকাকালীন শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটি তাকে বহিষ্কার করেছিল। উগ্র আচরণ, দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে পর্তুগালের দূতাবাস থেকেও তাকে প্রত্যাহার করেছিল বাংলাদেশ সরকার।

থোয়িং এর বিরুদ্ধেও অভিযোগ কম নয়। রাখাইন সম্প্রদায়ের থোয়িং ওমানে প্রবাসীদের সঙ্গে ক্রমাগত দুর্ব্যবহার করে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই প্রবাসী হিন্দু-মুসলিমদের ওপর জাতিগত বিদ্বেষ দেখান মাস্কাট মিশনের এ সেকেন্ড সেক্রেটারি। এমনকি, দূতাবাসে সেবা নিতে আসা ওমানী মহিলার সঙ্গে বাজে আচরণ করেছেন থোয়িং। এছাড়া প্রবাসীদের সেবা প্রদান বাধাগ্রস্থ করতে তিনি নানা কৃত্তিম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বিধি মোতাবেক তিন বছরের জন্য দূতাবাসে এসেছিলেন রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। ছয় বছর হয়ে গেলেও তিনি বহাল তবিয়তে দূতাবাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দূতাবাসে সেবাপ্রার্থী প্রবাসীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থের বিনিময়ে তিনি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি দেশে তিনি একটি বিলাসবহুল সাততলা বাড়ির কাজও সম্পন্ন করেছেন।

ওমানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন ১৫তম বিসিএস (পররাষ্ট্র) কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম। অভিযোগ তিনি দূতাবাসের সেবার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। উল্টো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশয় দিয়েছেন। এবং আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত নাজমুলের ভাই পুলিশের ডিআইজি মো. সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের সময় চট্টগ্রামে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত এ কর্মকর্তা বর্তমানে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমীতে সংযুক্ত।

ওমান দূতাবাসকে মৌসুমি রহমান সিন্ডিকেটের রাহুমুক্ত করার দাবি উঠেছে প্রবাসীদের মধ্যে। দূতাবাসের মূল কাজ প্রবাসীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার অসৎ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে, সৎ ও দেশপ্রেমী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবে বলেই তারা আশা করছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :