নোয়াখালীতে এখনো পানিবন্দি সাড়ে ১১ লাখ মানুষ
টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে পানি, বিদ্যুৎহীন ৮০ ভাগ এলাকা, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়
একটানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়েছে গাছপালা। কয়েকটি স্থানে ঘর ভেঙে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের লাইনে গাছ ভেঙে পড়ায় ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলায় বিদ্যুৎহীন ৮০ ভাগের বেশি মানুষ। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়।
বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতায় এখনো ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
শনিবার ভোর থেকে জেলায় থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে ঝড়ো বাতাস। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত) ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘূরে দেখা গেছে, বন্যাপরবর্তী তিন সপ্তাহের বেশি সময় জেলার কবিরহাট, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় স্থায়ী হয় জলাবদ্ধতা। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের বাড়ির উঠোন ও সড়কে হাঁটুপানি, কোথাও তার চেয়ে বেশি পানি ছিল। এক মাস ধরে দূর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ।
চাটখিল বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, গত আগস্ট মাস থেকে আমরা পানিবন্দি। মাঝে কিছুটা সময় রোদ থাকলেও কয়েক রাত বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়া-কমার মধ্যে ছিল। এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেল থেকে হালকা বৃষ্টি ও রাত থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে আগের জায়গায় উঠেছে।
ফলাহারী গ্রামের মাহফুজুর রহমানের বাড়ির উঠোন থেকে গত মঙ্গলবার পানি নেমে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে শনিবার সকালে আবার উঠোনে পানি উঠেছে। একই সাথে ঝড়ো বাতাসে বাড়ির পাশের একটি গাছ উপড়ে বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এখনো বিদ্যুৎ নেই (শনিবার বিকেলে সাড়ে তিনটা)। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
সাদ্দাম হোসেন নামের একজন জানান, এক সপ্তাহ আগে মাইজদীর প্রতিটি এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু গত রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে জজকোর্ট সড়ক, টাউন হল মোড়, সার্কেট হাউজ সড়ক, লক্ষ্মীনারায়ণপুর সড়ক, রেডক্রিসেন্ট ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সষ্টি হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় ৮-১০ ইঞ্চি বা কোথাও তারও বেশি পানি জমেছে।
সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মঞ্জুর আলম জানান, শনিবার ভোরে ঝড়ো বাতাসে ওই ওয়ার্ডের হেদায়েত মিয়ার ঘরের পাশে থাকা বড় একটি গাছ ভেঙে তার ঘরের ওপর পড়ে। এতে তার ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সবাই ঘরের ভিতরে ঘুমে থাকলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া ইউনিয়নে ঝড়ে গাছপালার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যুতের লাইনের আশপাশের গাছপালার গোড়ার মাটি সরে যায়। এ কারণে ঝড়ো বাতাসে গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের মাঠকর্মীরা সংযোগ সচল করার কাজ করছেন। তবে এখনো বেশির ভাগ লাইন সচল করা যায়নি।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতায় এখনো ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি। চালু থাকা ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩৮ হাজার ২৭১ জন বন্যাকবলিত মানুষ।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারি ১২৪টি ও বেসরকারি ১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/মোআ)