মেহমান সরকারকে জনপ্রিয়তা থাকতেই সংস্কার শেষ করতে হবে: আসাদুজ্জামান রিপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৪
অ- অ+

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করতে হবে এবং তার আগে দেশের আদালতে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে মেহমান সরকার আখ্যা দিয়ে জনপ্রিয়তা থাকতে থাকতে সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর ৭ দফা বাস্তবায়ন নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ‘দেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি নেতা রিপন বলেন, ‘গণহত্যাকারী কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না।’

আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা এবং আর্থিক খাতগুলো সব ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জনপ্রিয়তা থাকতে থাকতে দেশের সংস্কার কাজ শেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ৫ আগস্টের মানুষের মনোজগত আর ৫ আগস্টের পরের মানুষের মনোজগত সমান নয়। উভয়ের কথা মাথায় রেখেই তাদের সংস্কার কাজ করতে হবে। কোনো বাড়ির লোকেরা যেমন মেহমানকে অনেকদিন বেড়াতে দেখতে চায় না, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেড়ানো শেষ করতে হয়, বর্তমান সরকারকে সেই জিনিসটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে এবং জনপ্রিয়তা থাকতে থাকতে সংস্কার কাজ শেষ করে মেহমানের মতো সসম্মানে বিদায় নিতে হবে।’

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে বলা হয় মধ্যবর্তী সরকার, অর্থাৎ ইন-বিটুইন সরকার। দুই সরকারের মধ্যবর্তী যে সরকার তারাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার বা মেহমান সরকার। তাদের প্রয়োজন হলো নির্বাচন দেয়ার জন্য কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং কতগুলো বিষয়ে সংস্কার নিশ্চিত করা।’

এসময় প্রধান উপদেষ্টার সারা বিশ্বব্যাপী যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেই গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ এনে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পরামর্শ দেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এবং বিশ্বে ব্যতিক্রমী অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। সারা বিশ্বব্যাপী তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তার উচিত হবে দেশের এই ক্রান্তিকালে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আনা এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা।’

নিরপেক্ষতা হারালে বর্তমান সরকারের উপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরী হবে মন্তব্য করে রিপন বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি নিরপেক্ষ সরকার। তারা তাদের নিরপেক্ষতা যতদিন বজায় রাখতে পারবেন ততদিন মানুষ তাদের মাথার ওপর রাখবে। যদি কোনো কারণে নিরপেক্ষতা হারান তাহলে তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে এই সরকারের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরী হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে ডিজিএফআই ও আওয়ামী লীগের এজেন্ট রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে ডিজিএফআই ও আওয়ামী লীগের এজেন্টরা রয়েছে এবং তারাই সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। এই অরাজকতা ও হত্যাকাণ্ড তাদের প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে। তিনি এই সকল এজেন্টদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার জনগণের আন্দোলনের সরকার। তাদের কাছ থেকে মানুষ অবশ্যই নিরপেক্ষ আচরণ, নিরপেক্ষ বিচার ও গণতন্ত্র আশা করে। তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা।’

হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন পার্বত্য অঞ্চলে, গার্মেন্টস সেক্টরে, অলি-আউলিয়াদের মাজারে হামলা হচ্ছে, এসবকে নিয়ন্ত্রণে আনা এই সরকারের অন্যতম কাজ। প্রশাসন সংস্কারের নামে আওয়ামীপন্থি আমলাদের কেবল স্থান বদল করা হচ্ছে, আসল সংস্কারের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এদেরকে যথাস্থানে রেখে দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার সম্ভব না।’

এনপিপির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। সহযোগিতা নিতে চাইলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।’

জরুরি ভিত্তিতে এক লক্ষ পুলিশ নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আ.লীগ সরকারের সময় দুঃশাসনে যে সকল পুলিশ-আমলা সহযোগিতা করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর সাত দফা বাস্তবায়ন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এড. এহসানুল হুদা, গণদলের চেয়ারম্যান এ.টি.এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, এনডিপি চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান এম.এন শাওন সাদেকী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এস এম শাহাদাৎ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী, বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ শিপন, সাধারণ সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান, এনডিপির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, আবু হায়দার মো. সিদ্দিকুর রহমান, রমিজ উদ্দিন রুমী প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এমআই/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিষিদ্ধ দলের কার্যক্রম ও নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
ই-কমার্সকে দারিদ্র্য বিমোচনের কম্পোনেন্ট করতে চাই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
২১ মে থেকে পুনরায় ফ্লাইট চালু করছে নভোএয়ার
স্বাধীনতার পতাকা নিয়ে কথা বলায় সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে: রিজভী 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা