সারাদেশে পূজামণ্ডপে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে সারাদেশের পূজামণ্ডপে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক তৎপর রয়েছে।
বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গোৎসব। এরপর ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসব। সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
এই উৎসব উপলক্ষে দেশজুড়ে পূজামণ্ডপগুলোতে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনাও জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। এ ছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে পূজা চলাকালে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে এবার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। যেকোনো গুজব প্রতিরোধে সাইবার স্পেসেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের হেলিকপ্টারসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স। গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। প্রয়োজনে পুরো এলাকা সুইপিং করবে ডগ স্কোয়াড ইউনিট।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেকটি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক যেকোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর বাইরে মন্দিরের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীরাও সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবে। যে কোনো অসঙ্গতি দেখলে অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দুর্গোৎসব ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তারপরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে শতভাগ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, শারদীয় দুর্গাপূজা নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পূজারীদেরকেও কিছু নিরাপত্তা পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এগুলো হলো– ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মুঠোফোনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন কোনো অপরাধমূলক ঘটনা বা গুজব সৃষ্টি করে কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে অবিলম্বে পুলিশকে জানানো।
এ ছাড়া পূজামণ্ডপে আগত নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান পথের ব্যবস্থা করতে হবে। পূজামণ্ডপে কোনো ব্যাগ, থলে বা পোটলা নিয়ে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেইট স্থাপন করতে হবে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদেরকে আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও ‘স্বেচ্ছাসেবক’ লিখিত আর্মড ব্যান্ড দিতে হবে।
এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনমনে আস্থা বৃদ্ধিতে সীমান্তবর্তী পূজামণ্ডপে বিজিবির টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিজিবির নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের (১৭ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত মোট ৩৯টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। গত ৩ অক্টোবর এসব পূজামণ্ডপ ও আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অত্র ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক শাহ্ খালেদ ইমামের নেতৃত্বে দুটি পিকআপযোগে ১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য সব পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও রেকি কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
পূজামণ্ডপগুলোর সভাপতি, সনাতন ধর্মাবলম্বী জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতৃস্থানীয় ও গণ্যমান্য বক্তিবর্গের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মতবিনিময় করা হচ্ছে। এ ছাড়া রেকিদল পূজামণ্ডপগুলোতে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক, পূজামণ্ডপগুলোতে দুষ্কৃতকারীর হামলার আশঙ্কা রয়েছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করছেন ও বিজিবির বেইজ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য স্থান পরিদর্শন করেছেন।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই লক্ষাধিক আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিক। আইনশঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি। সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও আনসার এরই মধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবারের দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবারের মতো এ বছরও সারাদেশে ৩২ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে র্যাব। এ লক্ষ্যে র্যাব দেশব্যাপী চেকপোস্ট, গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম বাড়িয়েছে। পূজা উপলক্ষে যে কোনো ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে র্যাবের কুইক রেসপন্স টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া নিরাপত্তায় থাকবে ডগ স্কোয়াড।’
(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/এইচএ/এফএ)

মন্তব্য করুন