যেসব কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত আলেপ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গুম-খুনসহ নানান অভিযোগ আছে আলেপের বিরুদ্ধে, যা তিনি র্যাবে থাকতে করেছেন। এরইমধ্যে পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে বেশ কিছু অভিযোগ গেছে। আগামী সপ্তাহে আলেপের বিরুদ্ধে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
গুম কমিশনের সদস্য বিচারপতি (অব.) মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আলেপ গ্রেপ্তারের বিষয়টি কমিশনকে অবহিত করব। আগামী সপ্তাহে তার বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।’
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বলপূর্বক গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের জবাবদিহি করতে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠন করা হয়। এরইমধ্যে কমিশনে হাজারের বেশি অভিযোগ পড়েছে। যারমধ্যে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি।
আরও পড়ুন>হত্যা মামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন দুই দিনের রিমান্ডে
জানা গেছে, বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে। র্যাবে কর্মরত অবস্থায় আলেপ গুম-খুনে জড়িত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। ডিবি হেফাজতেও আলেপ কমিশনে যাওয়া অভিযোগ বিষয়ে নিজের দায় স্বীকার করেছেন।
৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা আলেপ ২০১৩ সালে পুলিশের চাকরি শুরু করেন। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায়। কর্মজীবনে আলেপ ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত র্যাবে কর্মরত ছিলেন। কাজ করতেন জঙ্গি সেলের ইনচার্জ হিসেবে। কু-খ্যাতি পান তিনি ‘জল্লাদ’ নামে। অভিযোগ আছে, জঙ্গি দমনের নামে অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানী প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ওরফে সামি সম্প্রতি আলেপ উদ্দিনকে নিয়ে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে বরখাস্তের পর তাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিয়াউলের মতো ঠান্ডা মাথার আরেক খুনি কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন। পুলিশের এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তার সহকর্মীরা জল্লাদ বলে ডাকেন, যা তিনি নিজেই বেশ গর্ব করেই নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। এই দানব নারায়ণগঞ্জ র্যাবে থাকাকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীরের পক্ষে জমি দখলের জন্য বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দিত। এ রকম এক ঘটনায় তাকে নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১ থেকে বদলি করে লালমনিরহাট জেলা পুলিশে পাঠানো হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে আলেপ সেখানে যাননি। বরং তিনি র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখায় পোস্টিং পান। বিভিন্ন নিরীহ আলেমদের ধরে এনে উদ্ভট জঙ্গি সংগঠনের নাম দিয়ে আটক করে জেলে পাঠাতো আলেপ। যার কারণে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক-বিপিএম ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশপদক-পিপিএম পান। এমনকি বিপিএম পদক ঘোষণা করা হয় পুরস্কারের আগের দিন রাতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও এই জল্লাদকে চাকরী করে যাচ্ছেন, আছে বহাল তবিয়তে। এসবি থেকে বদলি করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে পাঠানো হয়েছে তাকে। খুব অবাক হলাম এটা জেনে যে আলেপ এখনো চাকরিতে বহাল আছে এবং তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি!’
সায়ের খানের ফেসবুক পোস্টের পর রংপুর থেকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয় আলেপকে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। ডিবির একটি দল তাকে ঢাকায় আনে। এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আলেপকে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য মেলায় তাকে গ্রেপ্তারে অনুমতি চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। অনুমতির পর আজ বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলে পুলিশ।
অভিযোগ আছে, আলেপ নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব হোসেনকে দিয়ে রেলের জায়গা দখল করিয়েছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভাইকে চেয়ারম্যান বানাতে চেয়েছিলেন। এলাকায় মারামারিসহ ব্যাপক অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথ সংলগ্ন চায়না বাজার এলাকায় রেলওয়ের একটি বড় অংশ অবৈধভাবে দখল করেন।
গতবছরের জুলাইয়ে আলেপ উদ্দিনকে পুলিশের বিশেষ শাখায় বদলি করা হয়। তাকে গত ৮ সেপ্টেম্বর তাকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) করা হয়েছিল। এরপর গেল সপ্তাহে তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। বুধবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় আনা হয়।
ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/িএস

মন্তব্য করুন