গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ

গাইবান্ধা জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিকের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. হামিদুল হক ছানা। গত বছরের ৪ আগস্ট বিএনপির অফিস ভাঙচুর করা হলে ২৮ আগস্টের মামলার আসামিদের নাম কাটতে বর্তমান সভাপতি এই বাণিজ্য শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির দুর্বল, অযোগ্য নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বাতিল ও পদ বঞ্চিত, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের দাবি তুলে ধরে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট বিএনপির জেলা অফিস ভাঙচুর করা হয়। পরে ২৮ আগস্ট জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুল হাই বাদী হয়ে ১১৪ জন এজাহার নামীয় ও ১০০ থেকে ২০০ জন অজ্ঞাত আসামি করে গাইবান্ধা সদর থানায় এজাহার দাখিল করেন। এরপরেই শুরু হয় ডা. মইনুল হাসান সাদিকের মামলা বাণিজ্য। প্রথম ধাপে রনজিত বকসি সূর্য (জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি) এবং চঞ্চল সাহার নাম কাটেন। এরপর ধাপে চলে আসামিদের নাম কাটার বাণিজ্য। তিনি আরও বলেন, আমি অ্যাডভোকেট মো. হামিদুল হক ছানা, দীর্ঘ কারা নির্যাতিত সাবেক বিএনপির সভাপতি। ওয়ান ইলেভেনের পরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার অবৈধ পন্থায় সরকার গঠন করলে বিভিন্ন মামলা-হামলা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের জেলে পাঠানো হয়। পরে হঠাৎ করেই ২০১৭ সালের মার্চে ডা. মইনুল হাসান সাদিক ও মাহমুদুন নবী টিটুল জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে বসেন।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের সাথে হাত মিলিয়ে ত্যাগী, যোগ্য নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, গাইবান্ধা জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি শেখ সামাদ আজাদ, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি টি.এম. আবু বকর সিদ্দিকসহ জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে শুরু করেন কমিটি বাণিজ্য।
আরও বলেন, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন আওয়ামী নেত্রী আরজিনা পারভীন চাঁদনি। সেই আওয়ামী নেত্রীকে ডা. মইনুল হাসান সাদিক পলাশবাড়ী উপজেলার মহিলা দলের সভাপতি করেন। এছাড়াও আওয়ামী কর্মী হিসেবে পরিচিত নাছিমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিলে পরবর্তীতে পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে পড়ে কৌশলে মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের মাধ্যমে পদ থেকে সরিয়ে দেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, সরকার বিরোধী এক দফার আন্দোলনকে আরো গতিশীল করার জন্য ২০২৩ সালে নতুন নেতৃত্বে আসলেও ডা. মইনুল হাসান সাদিককে সেই সময় তেমন একটা মাঠে দেখা যায়নি। যার কারণে মুখথুবড়ে পড়ে জেলা বিএনপি। তিনি স্থায়ীভাবে বগুড়ায় বসবাস করেন, ডাক্তার হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে সংযুক্ত থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে জেলায় হঠাৎ উপস্থিত হয়েই বগুড়ায় ফেরত চলে যেতেন। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রয়োজন হলে তাদেরকেই বগুড়ায় যেতে হয়।
গত ১৭ বছর যারা নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার এবং একাধিক মামলার আসামি হয়ে কারা ভোগসহ হামলার শিকার হয়েছে এমন ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয়, অচেনা ও অনুপ্রবেশকারীদের কমিটি দিয়েছেন। তিনি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই গাইবান্ধা জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন বিএনপিকে খন্ড-বিখন্ডিত করেছেন। নাম মাত্র অভিযোগ এনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দলীয় পদ স্থগিত করেছেন।
তার অযোগ্য ও দূর্বল নেতৃত্বের কারণে গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়িতে চলছে দলীয় গ্রুপিং। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির এমন উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
শুধু তাই নয়, এসময় সাবেক এই সভাপতি অবিলম্বে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তি করাসহ দলের পদবঞ্চিত, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নসহ নতুন কমিটি ঘোষণা করার আহ্বান জানান। তা-না হলে গাইবান্ধার মাটিতে কোনো অবৈধ কমিটি মেনে নেওয়া হবে না এবং তার জন্য প্রয়োজনে যা করা দরকার তাই করা হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদুল হক ছানার নেতৃত্বে পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি গণ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
(ঢাকা টাইমস/২৮জানুয়ারি/এসএ)

মন্তব্য করুন