গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সম্পর্কে যা বললেন মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সে সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষন কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা সঠিকভাবে বলেছেন যে, একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সমস্ত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। যত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যা কিছু হয়েছে সব তার নির্দেশে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধবংস করে দেওয়া, ইনস্টিটিউশনগুলোকে ধবংস করে দেওয়া, সেটাই রিপোর্টে ফুটে উঠেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট এবং তিনি এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন, হত্যা করেছেন। ভারত সরকার অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে এবং তাকে ও তার সহযোগীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে, এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে, সত্য যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো আজকে উঘাটন হয়েছে। প্রবলেমটা হচ্ছে যে, জাতিসংঘ যখন বলে তখন আমরা সেগুলো সবাই বিশ্বাস করি। যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না।’
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল। বুধবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক ও অন্যরা।
এদিকে বিফিংয়ের আগে যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান তার পতাকাবাহী গাড়ি নিয়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে কার্যালয় থেকে তার গাড়ি বেরিয়ে যায়। এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
এ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৃটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার আজকে এখানে এসেছিলেন। এটা পূর্বনির্ধারিত ছিল। আজকে আবার কাকতালীয়ভাবে বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করবেন। কিছুক্ষণ পরেই এই মিটিং হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই মিটিংটা পূর্বে নির্ধারিত ছিল, বৃটিশ হাইকমিশনার নেই, সেজন্য ডেপুটি এসেছেন। আমাদের মধ্যে রুটিন আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন সেগুলো সম্পর্ক এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে প্রভৃতি বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন।’
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া হত্যা করা এটা শুধু পার্টিকুলার কোনো দল নয়, এখানে (আয়না ঘরে) বাংলাদেশের মানুষকে গুম করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে- এই কথাগুলো আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। যখন আয়না ঘরের রিপোর্টটা বের হয় আল-জাজিরাতে, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, তখন কিন্তু এটা সরকার পুরোপুরি ডিনাই করেছে। তারা বলেছে যে, এই ধরনের কিছু নাই। কিন্তু প্রথম থেকেই এই কাজগুলো হচ্ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আপনার মানুষকে তুলে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, সে জঙ্গি সংগঠন করছে- এই ধরনের কথা বলে আটকে রেখে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বের করার চেষ্টা করেছে। কিছু লোককে তারা রেখে দিয়েছিল যে, বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে দিয়েই জঙ্গি নাটক সাজাবে। ভুলে গেছেন নাকি আপনারা। একেকটা বাড়িতে জঙ্গির টেনিং হচ্ছে, পড়াশোনা হচ্ছে, জঙ্গিবাদ তৈরি করা হচ্ছে, বোমা তৈরি করা হচ্ছে, এসব দেখিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন. ‘কিন্তু আজকে প্রমাণিত হয়ে গেল, আমরা যে কথাগুলো বলেছি তা সত্যি। আওয়ামী লীগ সরকার ওই সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে।’
(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/জেবি/এজে)

মন্তব্য করুন