কেরানীগঞ্জে আ.লীগ নেতার দখলে স্থানীয়দের ২ হাজার একর জমি, অনেকে গ্রামছাড়া

ঢাকার কেরানীগঞ্জে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন আহমেদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, আনোয়ার হোসেনের সোনার বাংলা আবাসন প্রকল্পে শতাধিক মানুষের প্রায় ২ হাজার একর জমি, বসতবাড়ি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জায়গা-জমি দখল হয়ে যাওয়ায় অনেকে গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। অনেকের বাড়ির চারপাশে দেয়াল দিয়ে ঢেকে রাখায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না বাসিন্দারা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলা প্রশাসন মাঠে মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ভুক্তভোগী পরিবার ও সম্মিলিত সচেতন নাগরিকের ব্যানারে মানববন্ধনটি আয়োজন করা হয় ।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আল আমিন মিজি, কেরানীগঞ্জ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক এ কে এম কাউসার আহমেদ, ভুক্তভোগী মো. আনিস, ফৌজিয়া বেগম, দেলোয়ার হোসেন, কৃষক সুরজ মিয়া প্রমুখ।
কেরানীগঞ্জ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক এ কে এম কাউসার আহমেদ জানান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ তার ভগ্নিপতি মনিরুজ্জামানের সাকতা মৌজায় ১৯ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। এর বাজারমূল্য সাড়ে চার কোটি টাকা।
কৃষক সুরুজ মিয়া জানান, সোনাকান্দার মৌজায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নামে শাহীন চেয়ারম্যান তার নিজের ১৪ পাখি জমি এবং তাদের এলাকার লিয়াকত আলির ১৩পাখি, আশরাফ আলীর ৩ পাখি, নুর আলীর ৩ পাখি, আহসানুল্লাহর ৭ পাখি জমিসহ প্রায় এক হাজার একর তিন ফসলি কৃষিজমি জবরদখল করে মাটি ভরাট করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বানিয়েছে।
ভুক্তভোগী মো. আনিসের ৪ শতাংশ জমির ওপর বসতবাড়ি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার বাড়ির চারপাশে দেয়াল উঠিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন, যাতে আমরা তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হই। আমি বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। আমার স্বপ্নের বাড়ি এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে।’
আরেক ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন জানান, মুসলিমবাগ ব্রাহ্মণ কিত্তা মৌজায় তাদের ১৪৮ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে শাহিনের সহযোগী ও ছাত্রলীগের সভাপতি সালিম উল্লাহ শিমুল। সাকতা মৌজায় সাকতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলামিনের নেতৃত্বে দখল হয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ জমি।
আরেক ভুক্তভোগী দুলাল বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারের নেতৃত্বে সোনার বাংলা আবাসন প্রকল্পে দুই হাজার একর জমি দখল করে মাটি ভরাট করেছে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে জেলে আটক।
গত ৫ আগস্টের পর সোনার বাংলা আবাসন প্রকল্পের আনোয়ার ও কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ পলাতক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেরানীগঞ্জ মডেল থানা সার্কেল জান্নাতুল মাওয়া ভুক্তভোগীদের জমি দখলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের জমি দখলের বিরুদ্ধে তার কাছে ১০-১২ টি অভিযোগ রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের না পাওয়ায় অভিযোগগুলো সমাধান হচ্ছে না।
(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন