বিলুপ্তির পথে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী। জেলার প্রধান ফসল ধান। সারা দেশের মধ্যে ধান চাষে চতুর্থ স্থানে এই জেলা। বিশেষ করে আমন ধান ঘরে তোলা এবং রবি মৌসুমে দিনরাত কৃষকেরা যখন ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে ঠিক তখনি গৃহাস্থলি পণ্য সাজি, ডালা, কুলা, চালনি, চাটাইসহ কৃষি যোগানের নানা উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত থাকতো কুটির শিল্প তৈরির পরিবারগুলো। আজ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে যান্ত্রিক কোলাহলে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের কাছে এই শিল্প। বাজারে চাহিদার অপ্রতুলতা, উৎপাদন খরচ বেশি ও কম লাভ জনক হওয়ার কারণে বেশিরভাগ শিল্পীরা পেশা বদলিয়েছে কেউ বা বদলাতে চাচ্ছেন। যারা আছেন তারাও অর্থের অভাবে ধুঁকছেন বিষাদে।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের নরেশ মিস্ত্রি। বাবার হাত ধরেই ছোটবেলা থেকে বাঁশের পণ্য-সামগ্রী তৈরি করে আসছেন। তার কাজে সহযোগিতা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে টিকতে পারছেনা বাঁশের তৈরি পণ্য।
সদর উপজেলার ছোট বিঘাই এলাকার আরেক শিল্পী অবনি দাস। তিনি বলেন, দৈনন্দিন খরচ ও পণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। আগের তুলনায় বাজারে পণ্যের চাহিদাও কম। আয় কমেছে কয়েকগুণ। এই পেশায় থাকা এলাকার সবাই পেশা ছাড়লেও নিজের পেশা নিয়ে আছেন শঙ্কায়। বর্তমানে এ পেশায় থাকা সবার অবস্থা এখন একই রকম।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিসিকের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সারা বিশ্বে বাঁশ এবং বেতের সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। তিনি পুরানো জায়গা থেকে বের হয়ে পণ্যের আধুনিকায়ণ করার পরামর্শ এবং শিল্পীদের সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
পটুয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের বিকল্প হিসেবে বাজারে সহজলভ্য রকমারি প্লাস্টিকের পণ্যের যোগান অনেক বেশি। এসকল প্লাস্টিকজাত পণ্যের কারণে যেভাবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্র শিল্পগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে তেমনি বাজারে সস্তা প্লাস্টিকজাত পণ্যগুলোর অপব্যবহারে পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসকল পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে সকলের বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো উচিত।
(ঢাকা টাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এসএ)

মন্তব্য করুন