ধামইরহাট নিয়ে ইচ্ছা পূরণ হলো না ইউএনও মোস্তাফিজুরের

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলাকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুরতে চেয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না আকস্মিক বদলি হয়ে যাওয়ায়।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বদলিজনিত বিদায় অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের এ কথা বলেন তিনি। একজন গণমাধ্যমবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলার তিনটি প্রেসক্লাবকে সেতুবন্ধে আবদ্ধ করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৩১ অক্টোবর ধামইরহাট উপজেলায় যোগ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। চার মাসের মাথায় গত ৫ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় বদলি করা হয় তাকে।
ইউএনওর দায়িত্ব ছাড়াও তিনি একই সাথে ১০৩টি মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, অতিরিক্ত পৌর প্রশাসক, ভূমি কর্মকর্তাসহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
পৌরসভার আয়-ব্যয়ের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এর আগে যেখানে প্রতি মাসের পৌরকর আদায় হতো গড়ে ৫ লাখ টাকা, সেখানে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নভেম্বর মাসে আদায় করেছি ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩০০৮ টাকা। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৫ টাকা, জানুয়ারি মাসে ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৯০, ফেব্রুয়ারি মাসে আদায় ১১ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৮ এবং চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮০ টাকা আয়ের মধ্য দিয়ে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়।’ পুরো টাকাটাই পৌরসভার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার পথ প্রশস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে উপজেলার আমায়তাড়া হাট-বাজার ইজারার বাকি টাকা আদায়, ধামইরহাট বাজারের ইজারা মূল্যের সরকারি দরের চেয়েও এই বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বেশি আদায় করা হয়। এর আগে এই পৌরসভার হাট ছাড়া আয় ছিল এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, সেখানে চলতি বছরের ৪ মাস আগেই ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে।’
পৌর বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান মাত্র চার মাসে উপজেলায় দুর্নীতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, অবৈধ পুকুর খনন, ইটভাটা নির্মাণ ও মাদকসহ অসংখ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হঠাৎ তার বিদায়ে এই কাজগুলো থমকে গেল।’
মানবসেবার সভাপতি রাসেল মাহমুদ বলেন, দাপ্তরিক কাজের বাইরে দুস্থ ও সাধারণ মানুষের কাতারে গিয়ে নানান ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে অল্প সময়ে তিনি সবার নজর কাড়েন। এমন জনবান্ধব ইউএনও দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রয়োজন। তার বদলিজনিত বিদায়ের কারণে উপজেলার ভীষণ ক্ষতি হলো।‘
ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নওগাঁর ১১তম উপজেলা হিসেবে ধামইরহাটকে এক নম্বর উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা ছিল আমার মূল লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এ উপজেলাকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সাতজন নারীকে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সরকারি খরচে বিদেশে পাঠিয়েছি। যুবক এবং নারী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে জেলা চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ অর্জন করা হয়েছে। বিভাগে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’
এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জেলা এবং বিভাগে যেন প্রথম স্থান অর্জন করতে পারে এ জন্য উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিতার্কিক হয়ে গড়ে উঠছে।’
উপজেলায় একটি পৌর ভবন এবং একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা তার ভীষণ ইচ্ছে ছিল জানিয়ে বিদায়ী ইউএনও বলেন, ‘এ লক্ষ্যে জায়গাও নির্ধারণ করেছিলাম। তাছাড়া উপজেলার প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৫০০ জন শিক্ষার্থীকে বই রাখার ব্যাগসহ নানান ধরনের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। এ কাজে ৪২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। কিন্তু বিদায়জনিত কারণে আমার এই ইচ্ছেটা আর পূর্ণ হলো না।’
(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/মোআ)

মন্তব্য করুন