বাউফলে উত্ত্যক্তের শিকার স্কুলছাত্রীর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা

‘আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য, আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ সাতি চলে’ আত্মহত্যার আগে এমন চিরকুট লিখে গেছে পটুয়াখালীর বাউফলের এক স্কুলছাত্রী (১৬)। চিরকুটে পানি লেগে ছিল। লেখা শেষ না করেই আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। শুক্রবার বিকালে উপজেলার শৌলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠায় পুলিশ।
ছাত্রীর পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, উপজেলার পূর্বকালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ওই শিক্ষার্থী। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতো একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন (১৭)। বিষয়টি তাওসিনের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায় স্কুলছাত্রীর পরিবার। তবে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে তাওসিন। ছাত্রীর আরেক সহপাঠীর সঙ্গে তোলা ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে তাওসিন। বিষয়টি জানার পর চিরকুট লিখে নিজ কক্ষের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী।
নিহত ছাত্রীর মা কুলসুম বলেন, আমার মেয়ে অত্যন্ত ভদ্র ও লাজুক। তাকে বিভিন্ন সময় বখাটে তাওসিন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ওই বখাটের চাচাকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুক্রবার আমার মেয়ের সঙ্গে তার এক সহপাঠীর তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় ওই বখাটে। এতে লোকলজ্জার ভয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহত ছাত্রীর বাবা নজরুল ইসলাম খান বলেন, আত্মহত্যার আগে আমার মেয়ে চিরকুট লিখে গেছে। চিরকুটে আত্মহত্যার জন্য ওই ছেলেকে দায়ী করে গেছে। আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তাওসিন। আমরা ওই বখাটের ফাঁসি চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসলেও আমাকে জানানো হয় ঘটনার একদিন আগে। জানার পর আমি তাওসিন ও তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে সাবধান করে দিয়েছি।
এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত তাওসিন ও তার পরিবারের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা আত্মগোপনে চলে গেছে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রথমে বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি নিহত ছাত্রীর পরিবার। পরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
(ঢাকা টাইমস/১৫মার্চ/এসএ)

মন্তব্য করুন