হত্যা মামলার আসামি, আ.লীগ নেতার ছেলে সজীবের অবিশ্বাস্য দ্রুততায় জামিন, বিস্মিত খোদ বাদীও

রাজধানীর বনানীতে প্রাইভেটকার চাপায় নিরাপত্তারক্ষী দীন মোহাম্মদ মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মেহেদী মালেক সজীব জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকার একটি আদালত তাকে জামিন দেন। ইতোমধ্যেই তিনি কারাগার থেকে বেরিয়েও গেছেন। সজীবের অবিশ্বাস্য দ্রুততায় জামিনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদীও।
মেহেদী মালেক সজীব অভিজাত গুলশান ক্লাবের বোর্ড সদস্য। মেহেদী মালেক সজীব সম্পর্কে সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের নাতি। তার বাবা গোলাম মহিউদ্দিন লাতু নোয়াখালী সদর আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তারেক মাহমুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আসামি জামিন নিয়েছেন বা কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে বিষয়টি জানা নেই। আর বাদী পক্ষ পুলিশকে সহায়তা কম করছে। পরবর্তী ব্যবস্থা কি হবে তা নিয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলব।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছে বিষয়টি আমার জানা নেই।’ আদালতে আসামির জামিন হলে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তা জানানো হয় কি-না জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘কাগজ আসে। অনেক সময় দেরিতেও আসে।’
রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনি ভাবে তাকে রিমান্ডে আনার কোনো সুযোগ ছিল না। এ কারণে আর আবেদন করা হয়নি।’
এদিকে আসামির জামিন হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে মামলার বাদী মনির বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরেও আলোচিত এই মামলায় আসামি জামিন পেয়ে গেল। এখন তো ন্যায় বিচার নিয়েই সন্দিহান নিহতের পরিবার।’
অন্যদিকে বুধবার প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। তাতে
পোস্টে তিনি লিখেছেন— ‘গতকাল (মঙ্গলবার) বিকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) কাছে স্পেশাল পুটআপ দিয়ে জামিন শুনানি করেছে নিরাপত্তারক্ষী দ্বীন মোহাম্মদকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার একমাত্র আসামি মেহেদী মালেক সজীব। পরবর্তীতে একইদিন সন্ধ্যায় জামিন শুনানি করে তাকে জামিনও দেওয়া হয়েছে।’
সামি আক্ষেপ প্রকাশ করে আরও লিখেছেন— ‘যদি এমন একটি ঘটনায় যেখানে একজন মদ্যপ ব্যক্তি গাড়িচাপা দিয়ে পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে ভিকটিম মৃত্যুবরণ করেন তারপর জড়িত ব্যক্তিটি গাড়িটি পরিত্যক্ত করে আত্মগোপনে যান ও সুযোগ বুঝে কোর্টে হাজির হয়ে নিজ পেশা ও ঘটনার মিথ্যা বিবরণ দেওয়ার পরও জামিন লাভ করেন। তারপর সে বিষয়ে জনৈক সাংবাদিক প্রশ্ন তুললে জামিন বাতিল করে জড়িত ব্যক্তিকে পাঁচদিনের জন্য জেলে পাঠান ও ছয় নম্বর দিন বিশেষ আয়োজন করে তাকে আবার জামিন দিয়ে মুক্ত করে দেন।’
সামি আরও লিখেছেন— ‘তাহলে জেলে থাকা সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের জামিন স্থগিত করে তাদের এতোদিন ধরে জেলে আটকিয়ে রাখার কারণটা কি? তাদের বিরুদ্ধে পোশাককর্মী রুবেল হত্যার কোন রকমের আলামত বা প্রমাণ কি আদৌ পাওয়া গেছে? আপনারা যখন এতোই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছেন বা করার চেষ্টা করছেন তাহলে কি সেটা সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত না?’
গত ৩০ মার্চ রাতে (চাঁদরাত) মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন মেহেদী মালেক সজীব। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ক্লিনিকের সামনের সড়কে তার প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৬৫৩১) চাপায় গুরুতর আহত হন নিরাপত্তারক্ষী দীন মোহাম্মদ। পরের দিন (ঈদের দিন) রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত দীন মোহাম্মদ ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন। এই ঘটনার পর সজীব আত্মগোপনে চলে যান। সেইসঙ্গে বাদীর পরিবারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যান— যাতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা না হয়। তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলে সজীব সিন্ডিকেট। পরে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আদালত থেকে জামিন নেন মেহেদী মালেক সজীব। বিষয়টি জানাজানি হলে গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্লাহ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে ৫ এপ্রিল দীন মোহাম্মদ মৃত্যুর ঘটনায় বনানী থানায় মামলা করেন ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেডের পক্ষ থেকে মনির হোসেন নামে এক কর্মকর্তা। একইসঙ্গে আসামি যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন এজন্য আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে গুলশান বিভাগের ডিসি তারেক মাহমুদের নেতৃত্বে ঘাতক প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসএস/এমআর)

মন্তব্য করুন