লক্ষ্মীপুরে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় ফসলি জমির উর্বর মাটি গিলে খাচ্ছে ইটভাটায়। ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীদের এসব কাজে অবৈধ মুনাফার জন্য সহযোগিতা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা। পরিবেশ আইন অমান্য করে মাটিকাটার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব। যেন দেখার কেউ নেই।
এতে একদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাতের আঁধারে চলছে মাটিকাটার মহোৎসব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নোয়াগাঁও, শৈরশৈ, ভাটরা, দেহলা, বিঘা গ্রামে রাতের বেলা মাঠ থেকে মাটিকাটা শুরু করে। এতে ফসলি মাঠে সৃষ্টি হয়েছে ২০-৩০ ফুট গভীর বিশালকার একাধিক গর্ত। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পার্শ্ববর্তী জমির মাটি ভেঙে পড়ে গর্তে, এতে করে চাষবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেই জমিতে ও ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না, সেই জমিগুলো অল্প দামে ভূমিদস্যুদের কাছে বিক্রি করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। এই ভাবে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি, কমে যাচ্ছে উৎপাদন বেকার হচ্ছে কৃষক। হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ফসল কাটার পর জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হয়। এতে জমির উর্বরতা কমে যায় এবং পরবর্তী বছর চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়ে।
কৃষক আমিনুল হক বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার সময় থেকে এই জমিতে ভালো ফসল হতো। এখন মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে জমি শক্ত হয়ে গেছে, ফলন কমে যাচ্ছে।’
এদিকে স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, কৃষিজমির মাটি কেটে নেওয়ায় মাটির স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রকাশ্যেই এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফসলি জমির মাটি কাটার ফলে—
জমির উর্বরতা কমে যায়, ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায়, যা ভবিষ্যতে পানিসংকট তৈরি করতে পারে। মাটির ক্ষয়প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, কারণ একই জমিতে পরের বছর ভালো ফসল হয় না।
স্থানীয় কৃষক ও পরিবেশবিদরা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং বিকল্প ইট উৎপাদন প্রযুক্তির ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে রামগঞ্জের কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
ফসলি জমির মাটিকাটা রোধে স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ জনগণের সম্মলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে রামগঞ্জের কৃষি ও পরিবেশ অচিরেই বড় সংকটে পড়বে।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘ফসলি জমির মাটিকাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।’
(ঢাকা টাইমস/২৫এপ্রিল/এসএ)
মন্তব্য করুন