উত্তরায় যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত
পাইলট তৌকির সম্পর্কে যা জানা গেল

প্রশিক্ষণ চলাকালে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান। ভেঙে পড়ে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে। প্রাণ হারান অন্তত ২০ জন, আহত বহু। আর ভেতরের ককপিটে ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর।
মাত্র ছয় মাস আগে যার হাতে ছিল বিয়ের মেহেদি। বয়স ২৭-এর কোঠায়। সাগরের মৃত্যুতে তার স্ত্রী, মা-বাবা ও বোনের জীবনে নেমে আসে এক চিরস্থায়ী শূন্যতা, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
রাজশাহীর উপশহরে পরিবারটি থাকে এক ভাড়া বাসায়। সোমবার দুপুরে যখন দুর্ঘটনার খবর আসে, তখন ঘরে ছিল শুধুই স্তব্ধতা। কান্নার শব্দ যেন থমকে গিয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সাগরের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নেওয়া হয়।
চাচা মতিউর রহমান জানান, বিকেলের দিকে হঠাৎ খবর আসে—সাগর আর নেই। যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিছুদিন আগেও রাজশাহীতে ছিল। হাসিখুশি ছেলেটা, সবার প্রিয়। স্বপ্ন ছিল অনেক, তার কোনোটাই আর পূরণ হবে না।
তৌকিরের বাবা তোহরুল ইসলাম এবং মা সালেহা খাতুন সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ। ছোট বোন বৃষ্টি—তিনিও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
পরিবার জানায়, দাফনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মরদেহ আসার পর তারা ঠিক করবেন—রাজশাহীতে নাকি পৈতৃক এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায় সমাহিত করা হবে।
তৌকির ইসলাম সাগর ছিলেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উদীয়মান সদস্যদের একজন। সহপাঠীদের মাঝে ছিলেন দৃঢ়চেতা, দায়িত্ববান ও অনুপ্রেরণাদায়ী। বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ছিলেন প্রশংসার পাতায়। সেই পাইলটের জীবন থেমে গেলো স্রেফ কয়েক সেকেন্ডে—প্রশিক্ষণের মাঝখানে, দেশবাসীর চোখের সামনে।
তবে সাগরের জন্য থেমে থাকেনি শুধু তার বিমান। থেমে গেছে একটি নতুন সংসার, এক মা-বাবার স্বপ্ন, আর একটি বোনের প্রিয় ভাই ডাকার অধিকার।
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি জীবনের সমাপ্তি নয়, এটি বহু পরিবারের নিঃশেষ হওয়ার গল্প। উত্তরার স্কুলপ্রাঙ্গণে মৃত্যুর ছায়া শুধু সাগরকেই গ্রাস করেনি—নিয়ে গেছে আরও ১৯টি প্রাণ। বহু মানুষ এখনো আহত, অনেক পরিবার এখনো হাসপাতালে প্রহর গুনছে।
তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর খবরে কেবল রাজশাহী বা তার ঘনিষ্ঠজনরা শোকাহত হয়নি—শোক নেমেছে গোটা দেশের আকাশজুড়ে।

মন্তব্য করুন