গভীর নিম্নচাপে প্লাবিত উপকূল, ১৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বর্ষণের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪১| আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৩০
অ- অ+

উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক দুর্যোগ। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলসহ উপকূলের বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ অন্তত ১৬টি জেলার বহু লোকালয় পানির নিচে চলে গেছে। দুর্যোগের কারণে এসব এলাকায় নৌ-যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর সঙ্গে অমাবস্যার প্রভাব মিলিত হয়ে আরও ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকালে পায়রা বন্দর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থানরত নিম্নচাপের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়। বসতবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও কৃষিজমি ডুবে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপটি শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু দেশের ওপর সক্রিয় থাকায় অধিকাংশ বিভাগে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকবে।

জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে পাওয়া মেঘচিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দেশের প্রায় সব জেলার ওপর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে, ফলে সমুদ্র ও নদীর মোহনায় উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি বর্তমানে দুর্বল হওয়ার পথে থাকলেও ঝোড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সমুদ্র ও নদীতে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় নদীগুলোর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করছে, যা উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে আগামী তিন দিনে ফেনীর মুহুরী ও সেলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং সেখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বান্দরবান, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের নদ-নদী ও খালে পানি সমতল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেট অঞ্চলের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীর পানিও বাড়ছে, যা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি আপাতত স্থিতিশীল থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

উপকূলবাসীকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে পরবর্তী সতর্কতা জারি করবে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

(ঢাকাটাইমস/২৬ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চাঁদপুর শহরে গ্যাস লাইনে লিকেজ, সরবরাহ বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশবিরোধী গোপন চুক্তি করা চলবে না : বাংলাদেশ ন্যাপ 
নির্বাচনে কমিশনে আয়ব্যয় বিবরণী জমা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ
বিমান বিধ্বস্তের পর মানসিক ট্রমায় শিক্ষার্থীরা, পাশে দাঁড়িয়েছে বিমানবাহিনী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা