মির্জা ফখরুলের আসনসহ ঠাকুরগাঁও দখলের স্বপ্ন জামায়াতের, নাকি সম্ভাবনা?

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১৩
অ- অ+

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার বক্তব্য। আর সেই বক্তব্য নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জামায়াতের এই নেতার নাম মাওলানা আবদুল হালিম, দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

জামায়াত নেতা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসনসহ ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনেই জিতবে জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়েই চলছে বিতর্ক। কিন্তু অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে যা দেখা যায়, তাতে তার এই বক্তব্য কি নিছক স্বপ্ন নাকি সম্ভাবনার কথা বলে।

দেশে প্রথমবারের মতো স্বীকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী পৃথকভাবে অংশ নেয় ওই নির্বাচনে। সেবার সদর উপজেলা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ৫৭ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম। বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩৬ হাজার ৪০৬ ভোট পেয়ে হয়েছিলেন দ্বিতীয়। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ৮০০ ভোট। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ২১ হাজার ভোট পেয়ে হয়েছিলেন চতুর্থ। আওয়ামী লীগের বিজয়ী খাদেমুল ইসলাম ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন, পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও সবগুলো দল আলাদাভাবে অংশ নেয়। সেবারও ৩৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম। তবে এই নির্বাচনে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যবধান অনেক কমিয়ে আনেন । তিনি পেয়েছিলেন প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ ভোট নিয়ে জাতীয় পার্টি হয়েছিল তৃতীয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পেয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ ভোট।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোটের প্রার্থী ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৫৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে অনায়াসে জয়ী হন তিনি। সেবার জাতীয় পার্টির ভোট নেমে এসেছিল প্রায় সাত শতাংশে। অর্থাৎ তত দিনে জাতীয় পার্টির সমর্থকদের একটি অংশ বিএনপিকে সমর্থন শুরু করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জয়ী হতে না পারলেও ভোট পেয়েছিলেন ৪০ শতাংশের বেশি।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনে। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থী হিসাবে এই আসনে জয়লাভ করেন সিপিবির দবিরুল ইসলাম। তিনি পেয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে ১৮ দশমিক চার শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো বিএনপি। তাদের প্রায় সমান ১৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো জামায়াতে ইসলামী, আর জাতীয় পার্টি পেয়েছিলো ১৪ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগেভাগে দবিরুল ইসলাম সিপিবি ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। সেই নির্বাচনে তিনি ৪২ দশমিক দুই ছয় শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। সেবার ২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় আর ১৮ দশমিক ছয় তিন শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় হয় বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিলো ১৩ শতাংশ ভোট।

২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের জোট থেকে এই আসনে প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হাকিম। এই জোটের ভোট বাড়লেও যথারীতি জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের দবিরুল ইসলাম।

এবার ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ। ১৯৯১ সালে এই আসনে ৪২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল জাতীয় পার্টি। জামায়াত প্রার্থীর অবস্থান ছিল তৃতীয়, পেয়েছিলেন ১৫ শতাংশ ভোট। বিএনপির প্রার্থী পেয়েছিলেন সাড়ে চার শতাংশেরও কম ভোট।

১৯৯৬ সালে ৪৩ দশমিক আট শতাংশ ভোট নিয়ে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ, আর দ্বিতীয় স্থানে জাতীয় পার্টির ভোট ছিল ৪১ শতাংশ। সেবার সাত শতাংশের কিঞ্চিৎ বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় হয় বিএনপি, আর ছয় দশমিক তিন শতাংশ ভোট নিয়ে জামায়াতের অবস্থান ছিল চতুর্থ।

২০০১ এবং ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে এই আসনে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। এই দুটি নির্বাচনেই আসনটি দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৪৪ শতাংশের বেশি ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে চারদলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থীর ভোট ছিল মাত্র চার দশমিক সাত শতাংশ। অবশ্য ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থীর ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ।

অতীতের নির্বাচনগুলোর এসব পরিসংখ্যান বলছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় নির্বাচনী রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী এককভাবে জয়ী হওয়ার মতো লড়াই করতে পারেনি কখনো। এমনকি ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির সমর্থন নিয়েও এই দলের প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি।

তবে ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান নির্দেশ করছে গত ৩৫ বছরের নির্বাচনগুলোর ফলাফল। অবশ্য গত নির্বাচনগুলোর সঙ্গে আগামী নির্বাচনের সমীকরণ ভিন্ন হবে। কেননা, গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে লড়তে পারছে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। জাতীয় পার্টির অবস্থানও আগের মতো নেই।

এই দুই দলের ভোট কোন দিকে যাবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই আবহে আগামী নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনেই জামায়াতের জয়লাভের স্বপ্ন- শুধু স্বপ্ন নাকি সম্ভাবনা, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের নৈশভোজ
এক বছরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল ব্যাপকভাবে বেড়েছে: জামান মোল্লা
সরকারি খরচে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১২ লাখের বেশি মানুষ
জনভোগান্তি এড়াতে রাজধানীর ৯১টি স্থানে সভা-সমাবেশ করার প্রস্তাব ডিএমপির
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা