ঈদ আনন্দে মেতেছে ভৈরবের ত্রি-সেতু এলাকা

ঈদের আনন্দে মেতেছে ভৈরবের ত্রি-সেতু প্রাঙ্গণ। তীব্র তাপ উপেক্ষা করে মেঘনা নদীর পাড় এলাকায় নেমেছে মানুষের ঢল। ঈদের প্রথম দিন থেকে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিন পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ত্রি-সেতুর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন পরিবার স্বজন নিয়ে ভীড় করছেন। উৎসব আর আনন্দে মেতে উঠেছে পুরো ত্রি-সেতু এলাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত বন্দর নগর ভৈরব উপজেলায় মেঘনা নদীর ওপর ত্রি-সেতুর এলাকায় ঈদ উপলক্ষে বিনোদনপ্রেমী মানুষের ঢল নামে। ঈদের প্রথম দিনের সকাল থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত ত্রি-সেতু এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষণীয়। বিভিন্ন স্থান থেকে কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ অটোরিকশায় আবার কেউ মাইক্রোবাসে করে আসছেন। মেঘনা নদীর পারে চলছে আনন্দ উল্লাস। ত্রি-সেতু এলাকায় বসেছে বিভিন্ন দোকানের পসরা। এছাড়া রয়েছে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য মেঘনা রিভার তরীসহ ছোট ছোট নৌকা। এর মাধ্যমে লোকজন মেঘনা নদীতে নৌকা ভ্রমণ করতে পারছেন। সেখানে দর্শনার্থীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন। প্রতিবছর ঈদ ও নানা উৎসবে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় ভৈরবের মেঘনার পার এলাকা।
দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফরিন আক্তার মৌ বলেন, “ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে আমার বোন বেড়াতে এসেছেন। তাকে নিয়ে ভৈরবের মেঘনার নদীর পারে ঘুরতে এসেছি। ঢাকায় তো আর গ্রামীণ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখার সুযোগ নেই। সেজন্যই তাকে নিয়ে ভৈরবের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের জন্য এখানে এসেছি। অনেক ঘুরাঘুরি করেছি নদীতে নৌকা ভ্রমণ করেছি। বোনকে নিয়ে ফুচকা, চটপটি, মটকা চা খেয়েছি।”
স্থানীয় একটি হাসপাতালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন মুনিয়া আক্তার। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভৈরবের ত্রি-সেতু এলাকায় বেড়াতে আসেন। তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, “এটি ভৈরবের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। এখানে মেঘনা নদীর ওপর এক সঙ্গে তিনটি সেতু রয়েছে। এমন দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন অঞ্চলের নানা বয়সের লোকজন আসেন। আমিও দেখতে এসেছি। এখানে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে দোলনা, নাগরদোলা, নৌকা, ট্রেন, স্লিপার কোচসহ বিভিন্ন রাইডস। নদীর পাড় ত্রিসেতু এলাকায় বিকাল বেলায় সূর্যাস্ত দেখতে দর্শণার্থীদের ভীড় অনেক বেশি থাকে।”
নেসকে বাংলাদেশ লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি নাদিম মিয়া বলেন, “ভৈরবের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র ত্রি-সেতু এলাকা। এখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায়ই ঘুরতে আসি। আজকেও পবিত্র ঈদুল ফিতরে ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। মেঘনা নদী পারে পাথরে বসে বিকালের সময়টা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোই উপভোগ করা যায়। তবে সেতু এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে দর্শনার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। যদি ত্রি-সেতু এলাকায় সন্ধ্যার পর আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করা যায় তাহলে রাতের বেলায় মেঘনা নদীর পারের মনোরম দৃশ্য দর্শকরা উপভোগ করতে পারবেন।”
ত্রি-সেতু এলাকার ‘মামা ঝালমুড়ি’ খ্যাত দেলোয়ার হোসেন ৮ বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে আসছেন। তিনি বলেন, “অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ঈদ উপলক্ষে ভৈরবের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র ত্রি-সেতু এলাকায় দর্শনার্থীরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। এসময়ে আমাদের ঝালমুড়ি বিক্রি বেড়ে যায়। আগে যেখানে প্রতিদিন বিক্রি করতাম ৫-৭ হাজার টাকা এখন ২৫-৩০ হাজার টাকা ঝাল মুড়ি বিক্রি করতে পারি।”
নদীর পার এলাকার বিখ্যাত মটকা চা বিক্রেতা মো. তানভীর বলেন, “ভৈরবের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে মেঘনা নদীর ত্রি-সেতু এলাকায় পার্শ্ববর্তী নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে আসছেন। ঈদ ছাড়াও এখানে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন। ঈদ উপলক্ষে দোকানে মটকা চা বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৭-৮ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন প্রতিদিন ৩৫-৪০ হাজার টাকা মটকা চা বিক্রি করছি। যদি ত্রি-সেতু এলাকার পরিবেশ রক্ষাসহ ময়লা আবর্জনা ফেলবার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া হয় তাহলে পরিবেশটা অনেক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকবে।”
ত্রি-সেতু এলাকায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য মো. লিটন মিয়া বলেন, “ঈদ উপলক্ষে মেঘনা নদীর পারের সেতু এলাকায় দর্শনার্থীদের ভীড় বেড়েছে। প্রতিদিনই দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা বেড়াতে আসছেন। তারা যেন পরিবার পরিজন নিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুরাঘুরি করতে পারেন সেজন্যই সবর্দা আমরা দায়িত্ব পালন করছি। নদীতে কিছু বখাটে ছেলে নৌকা নিয়ে দর্শনার্থীদের নানাভাবে বিরক্ত করে থাকে। তাদেরকে আমরা সবর্দা নজরদারি রাখছি তারা যেন কাউকে কোনোভাবে বিরক্ত করতে না পারে।”
(ঢাকাটাইমস/০৪এপ্রিল/এফএ)

মন্তব্য করুন