আ.লীগ আমলে পরিচিতি ছিল দুর্নীতিবাজ হিসেবে, সেই গিয়াস উদ্দিন হলেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য
আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গিয়াস উদ্দিন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পতিত সরকারের আমলে ডিপিডিসিতে পরপর দুইবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বিষয়টি সমলোচিত হচ্ছে।
অভিযোগ আছে, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আশীর্বাদে অঢেল সম্পদের মালিক হন গিয়াস উদ্দিন। বুধবার এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে নিয়ে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি।
সেই পোস্টে তিনি বলেন, ‘ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও স্বেচ্ছাচারী আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনেও জমা পড়েছিল তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। লিখিত সেই অভিযোগে বলা হয়, 'ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি, দোকানসহ জায়গার মালিক হয়েছেন। নির্বাহী পরিচালক হওয়ার আগেই আলাদিনের চেরাগ ধরা দিয়েছিল তার হাতে। তখন সময়টা ছিল বিএনপি সরকারের। ঢাকার মোহাম্মদপুরের সূর্য নামে এক নেতার সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কাছে সূর্যের সঙ্গে প্রায়ই হাওয়া ভবনে যেতেন গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার। তাই বিএনপির আমলে ভালো পোস্টিং, বিদেশ ভ্রমণসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন কারাগারে থাকলেও তার সহযোগীর কাছে নিয়মিত অবৈধ অর্থের ভাগ পাঠাতেন এবং কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে খাবার ও টাকা দিয়ে আসেতেন গিয়াস জোয়ার্দার'-অভিযোগ করেন জুলকারনাইন সায়ের খান।
ওই পোস্টে আরও বলা হয়, গিয়াস উদ্দিন মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান হাউজিংয়ে দুইটি এবং লালমাটিয়াতে দুইটি ফ্ল্যাট আছে, যা তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এছাড়াও তার নামে-বেনামে অসংখ্য জায়গা ও দোকান রয়েছে। শুধু দেশে নই, এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিদেশেও সম্পদ রয়েছে। সন্তানদের পড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই কর্মকর্তা খোলস পাল্টিয়ে রাতারাতি একজন মন্ত্রীর বড় ভাই পরিচয়ে এবং একটি চক্রের সহযোগিতায় হঠাৎ ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার ডিপিডিসির প্রিপেইড মিটারের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন, তখন তিনি অনেক অনিয়ম করে শত কোটি টাকার মালিক হন। তৎকালীন সময় হেক্সিন ঠিকাদারী কোম্পানির নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার ক্রয় ও গ্রাহকের আঙ্গিনায় মিটার স্থাপনের সময় সরকারের অনেক রাজস্ব ক্ষতি সাধন করেছেন। তৎকালীন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিতও হয়েছিলো।
ডিপিডিসিতে অনেক যোগ্য লোক থাকতেও গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারের মতো অযোগ্য লোককে নেয়া হয়েছিল অর্থের বিনিময়ে। যার মূলে ছিলেন সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
সাংবাদিক সামি আরও লিখেছেন, 'ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক থাকাকালীন গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার প্রকল্প পরিচালকও ছিলেন। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ঠিকাদারকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ভেরিয়েশনের মাধ্যমে অন্তত দুইশ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। তাছাড়া ওই প্রকল্পের কাজের গুনগত মান নিম্নমানের হওয়ায় মাত্র এক বছরের মাথায় বেশকিছু ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায়। ডিপিডিসি গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারকে দুই দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পরও একটি ঠিকাদার চক্র তৃতীয়বারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। সার্ভিস রুলস্ সংশোধনের অনেক চেষ্টাও করা হয়েছিল। এই গিয়াস উদ্দিন জোয়াদ্দার ডিপিডিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন৷ নির্বাহী পরিচালক পদে আবেদনে শর্ট লিস্টে তার নাম ছিলো না। তবে পলাতক প্রতিমন্ত্রী বিপুর তদবিরে তিন নম্বরে তার নাম আসে এবং সকলকে ডিঙিয়ে তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পান। শুধু তাই নয় চাকরি শেষ হওয়া মাত্রই কোনো প্রকার সার্কুলার ছাড়া আবারো সেই প্রতিমন্ত্রী বিপুর এবং তৎকালীন বিদ্যুৎ সচিবের নির্দেশে পাওয়ার সেলের কনসাল্টেন্ট হিসাবে যোগদান করেন৷ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুর আশীর্বাদের কারণে এসব সম্ভব হয়।'
তবে অভিযোগ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এসএস/ইএস
মন্তব্য করুন