ভৈরবের রাজাকার মোমতাজের ভিটাবাড়ি এখন খেলার মাঠ

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
| আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৫৪ | প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৫২

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আজও ভুলতে পারেনি ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ এলাকার আদর্শপাড়া গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার মোমতাজ পাগলার অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, লুন্ঠন, ঘর বাড়িতে আগুন নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মোমতাজ পাগলা ভৈরবে সৃষ্টি করেছিল আলহাদি (তার ছেলের নাম) নামে এক রাজাকার দল। মোমতাজ পাগলা ছিল ভৈরবের কুখ্যাত রাজাকার এবং তার ছেলে ছিল পাঁচ জন। তারা সবাই তখন ছিল রাজাকার। ১৯৭১ সালে মোমতাজ পাগলা ও তার ছেলেদের বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী ছিল অতিষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় আলহাদি গ্রুপের রাজাকাররা শুধু কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ৬২ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়াও ভৈরবের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ সব মিলিয়ে হত্যার পরিমাণ প্রায় শতাধিক। তার বাহিনী অনেক নিরীহ মানুষকে পাক বাহিনীর সৈন্যদের দিয়ে ধরিয়ে হত্যা করে। কালিকা প্রসাদ এলাকার শত শত বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে তারা। লুন্ঠন করেছে এলাকার বাড়ি ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণ ও টাকা পয়সা। ধর্ষণ করেছে বহু নারীকে। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী ছিল তখন অতিষ্ঠ।

কুখ্যাত রাজাকার মোমতাজ পাগলাকে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধারা ভৈরব বাজার সিনেমা রোডের একটি দোকানে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যা করে। তাকে হত্যার নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা আতিক, নূরু ও মোহন। হত্যার সময় নিজ গ্রেনেডের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধা নূরু ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং আতিককে পাক বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে পরে হত্যা করে। তখন মোহন প্রাণে বেঁচে যান।

মোমতাজ পাগলাকে হত্যার পর তার ছেলেদের অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, আগুন এলাকাসহ গোটা ভৈরবে বেড়ে যায়। দেশ স্বাধীন হলে তার ছেলে গাউছ ছাড়া সবাই পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। পরে দীর্ঘদিন পর তারা দেশে ফিরে বাড়িতে ফিরতে চাইলে গ্রামবাসীরা বাধা দেয়।

একাধিকবার চেষ্টা করেও তার ছেলেরা তাদের বসত বাড়িতে কোন ঘর উঠাতে পারেনি। ২০০৪ সালে তার নাতিরা তার বাড়িতে দেয়াল করে ঘর নির্মাণ করতে চেয়েছিল। কিন্ত গ্রামবাসী দা, লাঠি নিয়ে জড়ো হয়ে বাধা দিলে তারা পালিয়ে যায়। তারপর একাধিকবার নাতিরা চেষ্টা করেও মোমতাজ পাগলার পৈতৃক বাড়িতে ফিরতে পারেনি। বর্তমানে বাড়িটি বিরানভূমিতে পরিণত হয়ে আছে।

মোমতাজ পাগলা বা তার কোন ছেলে এখন বেঁচে নেই। তার ওয়ারিশ হিসেবে এখন নাতিরাই বেঁচে আছে। তার পতিত বাড়িটি এখন গ্রামবাসীর খেলার মাঠ।

৪৫ বছর পরও গ্রামবাসী ৭১ সালের সেই অত্যাচার, নিপীড়ন খুন, ধর্ষণ লুন্ঠন, আগুনের কথা ভুলতে পারেনি।

এই গ্রামের বাসিন্দা সাহেদ উল্লাহ, বাচ্চু মিয়া, আলমগীর জানান, এসব কাহিনী। তাদের সাফ কথা মোমতাজ পাগলার বংশধর কখনও এই গ্রামে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবে না এবং আমরা গ্রামবাসী কখনও কোনদিন তাদের ফিরতে দেব না।

(ঢাকাটাইমস/২৪ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :