‘ইচ্ছামতো নদী দখল বন্ধ হয়েছে’

তায়েব মিল্লাত হোসেন
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:১৫

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান মো. আতাহারুল ইসলাম। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে এই কমিশন। সাবেক এই সচিব বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রশাসনে তার আলাদা সুনাম রয়েছে। প্রশাসনে যোগ দেওয়ার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। ওই বিভাগ থেকে তিনি ১৯৭৮ সালে স্নাতক ও ১৯৭৯ সালে স্নাতকোত্তর করেছেন। আতাহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৫৪ সালে খুলনায়। আগেও তিনি নদী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। নদ-নদী সুরক্ষায় নতুন জাতীয় প্রতিষ্ঠান নদী কমিশনের এখনকার কাজ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে অকপটে বলেছেন এই সময়কে। তার সঙ্গে আলাপ করেছেন তায়েব মিল্লাত হোসেন।

শুরুতেই আপনাদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাই

যারা নদীর সঙ্গে কাজ করে এমন সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও তদারক করা আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ। নদী বিষয়ে তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টিও আছে। এর মধ্যে সরকারি, বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই আছে। তবে নতুন বলে আমাদের আগে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে হচ্ছে। এখন অবশ্য অফিস দাঁড়িয়ে গেছে। জনবল নিয়োগের বিষয়টি এখনো বাকি আছে। এটা হয়ে গেলে আমাদের কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।

নদী নিয়ে এখন পর্যন্ত কী করেছেন?

দেখুন, নদী নিয়ে কাজ করতে গেলে, নদীর তথ্য নিয়ে এখনো আমাদের অথৈ সাগরে পড়তে হয়। তাই আমরা দেশের সব নদীর তথ্য সংগ্রহ করে একটি ডাটাবেইজ করার কাজে হাত দিয়েছি। নদী সুরক্ষায় তৃণমূলের মানুষকে যুক্ত করতে হবে। নইলে নদী রক্ষা করা যাবে না। এজন্য আমরা নদী অববাহিকার জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, স্থানীয় প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা- এদের নিয়ে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে তিনটি করে কমিটি করছি। বিভাগীয় কমিশনার প্রতি মাসে তাদের নিয়ে একটি করে সভা করবেন। এভাবে এলাকার মানুষই তাদের নদীর সমস্যা সমাধান করবে।

নদী রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ নিয়ে জানতে চাচ্ছি

নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জে বরাল নদীর ২২০ কিলোমিটার অববাহিকায় ১৮টি ক্রস ড্যাম আছে। এগুলোর কারণে নাব্য কমে গেছে। তাই এই ড্যাম অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি ওঠে গেছে। এভাবে বরালে অবাধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গার আদি প্রবাহ উদ্ধার করা যায় কি না তা নিয়েও আমরা কাজ করছি। এ নিয়ে আমরা জরিপ করছি। এ বিষয়ে মহামান্য আদালতেরও কিছু নির্দেশনা আছে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। বুড়িগঙ্গার পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো সক্রিয় হতে হবে। আমাদেরও নদ-নদীর সুরক্ষায় অনেক কাজ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে নদীপথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি, যা এখন পাঁচ-সাত হাজার কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এতে করে নদী আসলে থাকল কোথায়?

নদী রক্ষায় জনসচেতনতা জরুরি নিয়ে কী করছেন?

নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিআইডব্লিউটিএর এখনকার যে অভিযানগুলো, তাতেও কিন্তু আমাদের ভূমিকা আছে। এতে করে এক ধরনের বার্তা পাচ্ছে স্থানীয় জনগণ। জনসচেতনতায় আমরা অনেক নদীর তীরে সভা করেছি। ‘এসো নদীর গল্প শুনি’ শীর্ষক প্রচারণামূলক কর্মসূচি পালন করছি জেলায় জেলায়।

আপনারা নদী বিশেষজ্ঞদের কতটা যুক্ত করতে পেরেছেন?

আমরা দেশের পানি বিজ্ঞানী, নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়েও কাজ করব। নদী সুরক্ষায় স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য তাদের অবশ্যই যুক্ত করতে হবে। নতুন প্রতিষ্ঠান বলে এ বিষয়গুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

সোয়া দুই বছরের বেশি হিসেবে কাজ কী যথেষ্ট?

আইনগতভাবেই আমাদের প্রায়োগিক ক্ষমতা অনেক কম। আমরা অনেক কিছু দেখছি, জানছি, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কিছুই করার নেই। যেমন, ঢাকার শ্যামপুরে নদীর তীরে কল-কারখানায় কারো পরিশোধনাগার নেই। টঙ্গিতে আরো খারাপ অবস্থা। শিল্পমালিকরা প্রায় ক্ষেত্রেই পরিবেশের তোয়াক্কা করছেন না। আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এজন্য আমাদের অন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারপরও আমরা মাঠে নামার পর ইচ্ছামতো নদী দখল বন্ধ হয়েছে। কারণ আমরা এ বিষয়ে দ্রুত সরকারকে তথ্য দিচ্ছি।

মাঠপর্যায়ে নদী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কোন কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে?

নদীর সীমানা নির্ধারণ কঠিন একটি বিষয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে সিএস, আরএস রেকর্ড দেখে নদীর সীমানা দিতে হবে। তবে জেলা রেকর্ড রুমগুলোতে অনেক নদীর রেকর্ডপত্র নেই। এগুলো সংগ্রহে আলাদা করে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে।

নদী কমিশনের সক্ষমতার জন্য কী দরকার?

আইনের থাকা ক্ষমতার মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে। তবে লোকবল নিয়োগ হলে কাজে গতি আসবে। এছাড়া আমরা এখন ভাড়া বাসায় অফিস করছি। কমিশনের স্থায়ী একটি ঠিকানা দরকার। সরকার জায়গা বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী ভবন করে দিলে আমাদের সুবিধা হবে।

এই কমিশন নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী? কোথায় রেখে যেতে চান?

আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে নদী কমিশনকে অনেকে কাগুজে বাঘ বলছে। একটা সময় এই কথা বলার দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। অবশ্য সেই সময়টা এখনো আসেনি। দেশের নদ-নদীর সুরক্ষায় আমরা এমন সব পরিকল্পনা নিয়েছি, এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের নিয়ে আর কোনো সমালোচনা থাকবে না।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

আপনাকেও ধন্যবাদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :