অদম্য বাংলাদেশি রাশিদুলের রূপকথার মত গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ মে ২০১৭, ১৬:৫৩ | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০১৭, ১৬:৩৫

নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী জীবন শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ছেলে রাশিদুল বারি। অথচ এখন তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগে গণিত শিক্ষা নিয়ে পিএইচডি করবেন।

আজ (বৃহস্পতিবার) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছেন। শুধু কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল লেভেলে ভর্তি হবেন এজন্য একের পর এক আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায়, মোট পাঁচটি ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এই অদম্য বাংলাদেশি।

রাশিদুল বারি ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি যখন জেনারেল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (জিইডি) পরীক্ষায় পাস করলেন তখন অনেকেই তাকে বলেছিলেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন না। বিশ্বের ‘নাম্বার ওয়ান’ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কথা ভুলে যেতেও পরামর্শ দিয়েছিলেন কেউ কেউ।

ফেসবুকে নিজের কষ্টার্জিত সাফল্যের কথা জানিয়ে রাশিদুল বারি লিখেছেন, একটি বিশেষ স্বপ্নপূরণে হাল ছেড়ে না দেয়ার গল্প বলছেন তিনি। বারি জানিয়েছেন, ইয়র্ক কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর প্রথমবারের মত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন। কিন্তু তার আবেদন গৃহীত হয়নি।

২০০৯ সালে ব্রুকলিন কলেজ থেকে প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এবার তিনি কলম্বিয়ায় পিএইচডি ভর্তির আবেদন করেন। কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি রাশিদুল বারি। এরপর নিউইয়র্ক সিটি কলেজ থেকে দ্বিতীয়, ল্যামেন কলেজ থেকে গণিতে তৃতীয়, একই কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে চতুর্থ এবং কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পঞ্চম ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন।

প্রতিবারই রাশিদুল বারি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার আবেদন প্রতিবারই নাকচ করে দেয়। এরপরেও হাল ছেড়ে দেননি এই অদম্য বাংলাদেশি। দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে।

দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে আবার আবেদন করেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য। এবার আর ভর্তি না করে পারেনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অষ্টমবার আর চেষ্টা করতে হয়নি রাশিদুল বারিকে।

২০০০ সালে নিরাপত্তারক্ষীর এর চাকরি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবন শুরু করেন রাশিদুল বারি। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা নেয়ার নেশায় যিনি বিভোর তিনি কি আর এই চাকরিতে ডলার কামিয়ে জীবন কাটিয়ে দেবেন? ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় রাশিদুলকে ৮০ হাজার ডলার বৃত্তি দিলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। এর পরের ইতিহাস এখন সবার জানা।

একজন বড়মাপের শিক্ষাবিদ হওয়ার স্বপ্নে সংগ্রামময় জীবনের অধিকারী রাশিদুল বারি কলেজ অব স্টেটান কলেজ এবং ব্রংস কমিউনিটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া টাইমস অব ইসরায়েল, হাফিংটন পোস্ট, জেরুজালেম পোস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া ইত্যাদি পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন।

সংগ্রামমুখর সাফল্যমণ্ডিত জীবনে বিয়ে করে সংসারী হতে ভুলেননি রাশিদুল বারি। স্ত্রী শাহেদা বারি ও দুই পুত্র সন্তান আইজাক এবং আলবার্টদের নিয়ে তার সংসার। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পরিচয়পত্র পাওয়া উপলক্ষে বাবার ক্যাম্পাসে এসেছিল আইজ্যাক এবং আলবার্ট। বাবার পরিচয়পত্র পাওয়া উদযাপন করতে মায়ের সাথে পুরো ক্যাম্পাস ছুটে বেরিয়েছে তারা।

রাশিদুল বারি বৃহস্পতিবার ঢাকাটাইমসকে বলেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে তিনি গর্ববোধ করেন। প্রবাসে নিজের কর্ম দিয়ে যেন জন্মভূমির মর্যাদা সমুন্নত রাখতে পারেন, সেজন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

ঢাকাটাইমস/০৪মে/নিজস্ব প্রতিবেদক/এসএএফ

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রবাসের খবর এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :