এ কেমন সাংবাদিকতা?

কাওসার শাকিল
 | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০১৭, ১০:২৩

ঈদ চোখে দেখা যায় দুই জায়গায়। ঢাকা শহরের রাস্তায় আর টিভিতে। ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। হত দরিদ্র লাগে উপচে পড়া জনতার প্রাচুর্যের শহরটাকে।

আর ঈদে দেখতে পাবেন টিভিতে। তবে না চাইলেও এখানেও নজরে আসে দারিদ্র্য। মেধা আর সৃজনশীলতার দারিদ্র্য।

টিভির মূলত বিভাগ থাকে কয়েকটি। এর মধ্যে প্রধান হলো সংবাদ আর অনুষ্ঠান। আর ঈদ আসলেই দেখা যায় কোন টিভির এ দুটি বিভাগ কতটা দ্যৈন। ঈদের অনুষ্ঠান মানেই বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে দেখতে পাওয়া নাটক। ঈদের নাটক নিয়ে মেলা মেলা কথা বলা হয়ে গেছে আগেই, এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে যাওয়ার মানে হয় না। তারচেয়ে বরং সংবাদ নিয়ে একটু কথা বলি।

ঈদের সংবাদ মানেই ‘নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখী মানুষ’ টাইপের মুখস্থ খবর। গত ঈদের স্ক্রিপ্টই একটু এদিক সেদিক করে চালিয়ে দেয়া যাবে। এরপর আছি কিছু বাধাধরা আইটেম। বৃদ্ধাশ্রমের ঈদ, এতিমখানার ঈদ, বস্তির ঈদ ইত্যাদি। এবছর অবশ্য নতুন একটা আইটেম যোগ হয়েছে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতদের পরিবারের ঈদ।

সংবাদমাধ্যমের এই ধরবাধা নিউজ আইটেমগুলো দেখতে দেখতে দর্শক ক্লান্ত, এটা হয়ত টেলিভিশনের মাথাদের মাথায় আসে না। কিন্তু বিষয়গুলো কতটা সংবেদনশীল সেটাতো তাদের বোঝা উচিৎ। একজন প্রতিবেদক যখন বৃদ্ধাশ্রমের একজন বৃদ্ধের মুখের সামনে মাইক্রোফোন ধরে বলেন তার পুরনো দিনের কথা, ছেলে মেয়েদের অবহেলার কথা জিজ্ঞেস করেন, তখন কি ভেবে দেখেছেন সেই মানুষটির কেমন লাগে? এটা কি টিভির রিপোর্টার, নিউজ এডিটর, ম্যানেজিং এডিটররা ভেবে দেখেছেন? উনি কি খুবই আনন্দের সাথে, আগ্রহের সাথে এই কথা বলছেন? এটা কি ভেবে দেখেছেন? উনার কষ্টটা আমলে না নিয়ে শুধুমাত্র দর্শকদ টানতে গালভরা প্রতিবেদন করা আসলে কতটা জরুরি, সেটাও কি একবার ভাবা যেত না?

আরেকটি টিভিতে নিউজ হয়েছে আজিমপুরের এতিমখানা নিয়ে, পেছনে দর্শকদের জোর করে কাঁদানোর চেষ্টা হিসেবে পেছন থেকে জুড়ে দেয়া হয়েছে করুন সুর। একজন পিতৃমাতৃহীন বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করেছে, তার বাবা-মায়ের কথা মনে কি না, তারা ঈদে কী করতেন। এই শিশুটির জন্য এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা কতটা সহজ বলে মনের আপনারা? কতটা জরুরি এই বাচ্চাটার মনে ঈদের আনন্দের বদলে বিষন্নতা ঠুসে দেয়া।

যে প্রতিবেদক এই প্রতিবেদন করেন তার নিজের কোনো স্বজন যদি ছোট বাচ্চা রেখে মারা যান, তখন কি তিনি সেই বাচ্চাটার কাছে জানতে চাইবেন, ‘তোমার বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে? ঈদে তোমাদের জন্য কী করতো?’।

কেউ আবার রিপোর্ট করেছে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে যে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের পরিবার নিয়ে। তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিলো পরিবারের একজনকে হারিয়ে ঈদ কেমন হয়েছে। সেই একই প্রশ্ন-তাদের সঙ্গে ঈদ কেমন কাটতো? তাদের ছাড়া কেমন লাগে?

এই পরিবারগুলো স্বজন হারিয়েছে। তাদের কষ্ট লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে আলাদা করে প্রতিবেদন থেকে কি কিছু উঠে আসার সম্ভাবনা আছে? আমি তো মনে করি নেই। কেউ কেউ অবশ্য সরকারের কাছে স্বজনদের নানা দাবি তুলে ধরেছেন প্রতিবেদনের মাধ্যমে। সেটাও কিন্তু করা যেত অন্য কোনো সময়, ঈদের সময়ে না করলেও হতো।

কেননা ঈদ এই মানুষগুলোর জন্য এমনিতেই যথেষ্ট কষ্টের। খুচিয়ে খুচিয়ে তাকে আরো বাড়াতে যাওয়াটা অন্যায়। সাংবাদিকরা একটু সংবেদনশীল হলে এ কষ্টটুকু থেকে তার বাঁচেন। অন্যায়টা তাদের সাথে ঘটে না।

লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :