বাধাগ্রস্ত শিশুর প্রতিভা ও আমাদের ভাবনা

এম.এইচ. মিলু
 | প্রকাশিত : ২০ জুলাই ২০১৭, ১১:২৯

এদেশের প্রসিদ্ধ চিত্রকর বলতে আমরা যাদের নাম শুনি তাদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, এসএম সুলতান, হাসেম খান প্রমুখ প্রায় সবারই পরিচিত। এদেশে জয়নুল আবেদিন বা এসএম সুলতান একদিনে তৈরি হয়নি। একদিনে জগৎবিখ্যাত চিত্রশিল্পী হওয়াও সম্ভব না। শিশু আঁকিয়ে থেকে এক সময় বড় শিল্পী হয়ে থাকে। শিশুরা নানা উৎসবে সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকে। শিশু তার মানের সর্বোচ্চ তীক্ষ্ণতা দিয়ে ছবিকে সুন্দরতম হিসেবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। শিশুদের এমন চিত্রকর্মের স্বীকৃতি তাদের প্রতিভাকে বহুগুণে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

আমরা বিভিন্ন সময় এমনসব শিশু শিল্পীর আঁকা ছবি জাতীয় পোস্টার বা কার্ডে ছাপাতে দেখি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উৎসবের শুভেচ্ছা কার্ডেও শিশুদের আঁকা এমন সুন্দর ছবি স্থান পায়। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকে। এসব প্রতিযোগিতায় সাধারণত সংশ্লিষ্ট দিবস বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহাসিক নানা বিষয়ে শিশুদের আঁকার উৎসাহ দেয়া হয় যাতে তারা এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানে। এক্ষেত্রে শিশু তার মানসপট থেকে রং তুলির আঁচড়ে কখনো জাতির পিতার প্রতিকৃতি, কখনো স্বাধীনতার বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ আবার কখনো বা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

সম্প্রতি এমন এক প্রতিযোগিতায় বরিশালের আগৌলঝাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্রিজা করের আঁকা জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কার্ডে ব্যবহার নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হয়। যে মামলায় আদালত উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রথমে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয় এবং পরে জামিন মঞ্জুর করে (সংবাদপত্রে প্রকাশ)।

একটা কোমলমতি শিশু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে তার স্মৃতিতে ধারণ করে শিল্পী সত্তার প্রকাশরূপে চিত্রিত করেছে এটা জাতির জন্য আশার খবর। এ শিশু আগামীর জয়নুল আবেদীন বা এসএম সুলতান হওয়ার প্রতিযোগিতা মনের মধ্যে এখনই গেঁথে নিয়েছে। জাতির পিতাকে সে ধারণ করেছে এবং তা প্রকাশ করেছে। ফলে শিশুটিকে এ জাতি বুক ভরে সাহস যোগাবে যাতে সে তার ক্ষুরধার হাতের ছোয়ায় এদেশ, এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এদেশের জাতির পিতাকে দেশময় এমনকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে। এ শিশুর মাঝে আমাদের আগামীর লিওনার্দো কে খোঁজার কথা যাতে এ শিশু এগিয়ে যেতে পারে বাধাহীন পথে। কিন্তু বাস্তবতা যদি এমন হয় যে, শিশুর ক্ষুদ্র হাতের আঁকা ছবির ব্যবহার তাকে আসামি করে, তাকে উৎসাহ প্রদানকারীকে অভিযুক্ত করে! তাহলে কোনো বাবা-মা কি তার শিশুকে জাতির পিতা কিংবা জাতীয় ভাস্কর্য আঁকার উৎসাহ দেবে, কোনো শিক্ষক কি তার শিক্ষার্থীকে এমন ছবি আঁকার উৎসাহ দিয়ে অপরাধী হতে চাইবেন, কোন সরকারি কর্মচারী কি কোনো শিশুর চমৎকার চিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে অভিযুক্ত হতে চাইবেন!

আসুন, আমরা আজকের শিশুর প্রতিভাকে বাধাগ্রস্ত না করে উৎসাহিত করি। স্বীকৃতি প্রদান করি যাতে এ শিশুর চিন্তা চেতনাকে বেঁচে থাকে জাতির পিতা, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের লাল সবুজ পতাকা। তাহলেই কেবল কখনো হারাবে না আমাদের বঙ্গবন্ধু, আমাদের স্বদেশ, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের লাল সবুজ পতাকা। জাতির কাছে এতটুকু অনুরোধ রাখা অতিরঞ্জিত হবে না বলেই আশা করি।

লেখক: সাংস্কৃতিক কর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :