ভরা মৌসুমেও মেঘনায় মিলছে না ইলিশ
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনায় ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশের। মাছ না পাওয়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে এই দুই উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। ইলিশ শূন্যতায় হাহাকার চলছে দুই উপজেলার জেলেপাড়াগুলোতে। অভাব অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে জেলে পরিবারগুলো। নদীতে জাল ফেলে দুই-একটা ইলিশের দেখা মিললেও আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধের ভাবনাই জেলে পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা।
উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই কৃষি কাজ ও মৎস্য আহরণে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সরকারি হিসাবে এ জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৭হাজার সাতশ’৭১জন। এদের মধ্যে রামগতিতে নিবন্ধিত জেলে ১৭হাজার চারশ’ ৩১, ও কমলনগরে ১৪হাজার একশ’ জেলে। এ ছাড়াও নিববন্ধনের বাইরের জেলে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক।
ইলিশকে ঘিরেই এখানকার জেলে এবং আড়তদারদের জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে। গত মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাস নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতেই দেখা দিয়েছে নদীগুলোতে ইলিশের আকাল। আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় জেলে এবং আড়ৎদারদের পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। বছরের বৈশাখের শেষের দিকে নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠলেও জ্যৈষ্ঠ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম বলেই জানান জেলেরা। সেই হিসেবে ইলিশ মৌসুমের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও মেঘনায় আশানুরুপ দেখা মিলছে না ইলিশের।
স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মেঘনার মাঝ নদীতে অনেকগুলো ডুবচরের কারণে অবাধে ইলিশ আসতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও নদীতে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে বলে ধারনা তাদের।
জেলেরা জানান, জ্যৈষ্ঠ থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু মৌসুমের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। সারাদিন জাল বেয়ে খরচের টাকা উঠছে না। নদীতে জাল ফেলে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। অনেকেই এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবেন ভাবছিলেন, কিন্তু ইলিশ না পাওয়া ঋণের দেনা শোধ করতে পারছেন না। ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কথা শুনতে হচ্ছে।
কমলনগরের মতিরহাট, কটরিয়া, লুধুয়াসহ বিভিন্ন মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে নৌকা নোঙর করে জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। দুই-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। কারণ, এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা তার দশ ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনা-বেচা নেই। ফলে আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়তদাররাও।
এদিকে আড়তদাররা ইলিশের ওপর নির্ভর করে জেলেদের মাঝে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। মেঘনায় মাছ পাওয়া গেলে তা বিক্রি করে একটা নিদিষ্ট অঙ্কের মুনাফা অর্জন করবেন এ আশায়। কিন্তু তাদের চোখে এখন বিষাদের ছোঁয়া।
লুধুয়া মাছঘাট এলাকার জেলে কামাল মাঝি, হাতেম মাঝি ও মনির মাঝি জানান, প্রতিবছর এ সময়ে নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পান তারা। কিন্তু এ বছর নদীতে তেমন ইলিশ নেই। নদীতে জাল ফেলে প্রায় খালি হাতে ফিরতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
কটরিয়া মাছঘাটের আড়তদার আকতার হোসেন জানান, ইলিশের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার। বর্তমানে নদীতে ইলিশ না থাকায় ধারদেনা করে সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কমলনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নদীতে পানিপ্রবাহ কম থাকলে ইলিশ কম আসে। এখন পানির প্রবাহ একটু কম। তবে দুই-একদিন পরে প্রবাহ বাড়লে জেলেরা ইলিশ ধরেও কূল পাবেনা।
ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/প্রতিনিধি/এমআর