নতুনের কেতন উড়ছে
একুশ শতকের পৃথিবী। নতুনের পৃথিবী। নতুনের ‘নতুন স্বপ্নের’ পৃথিবী। মানতে হবেই।
সরকারি বা বেসরকারি, যে সার্ভিসেই তারা যাচ্ছে, সবখানেই নতুন কিছু করার, ভালো কিছু করার দৃপ্ত প্রত্যয়। দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে তাদের পথচলা। ‘নতুনের পৃথিবীর নতুনদের’ স্যালুট, তাদের নতুন চেতনাকে অকৃত্রিম-অসামান্য অভিবাদন।
মানু্ষের প্রাণের ভূমি বিষয়ক সেবা দিতে কোনো এসিল্যান্ডের সৃজনশীল ‘মাটির মায়া’ সৃষ্টি, পুলিশ-ভেরিফিকেশনে ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন বিসিএস কর্মকর্তাদের অভিবাদন জানাতে কোনো এএসপির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, কোনো সাব-রেজিস্ট্রারের ভূমি বিষয়ক অ্যাপস তৈরির প্রাণান্ত প্রচেষ্টা, বা সেবাকে জনমুখী করতে বিআরটিএ-পাসপোর্টের কোনো এডি’র উদ্ভাবনী উদ্যোগ দেখে অভিভূত হয়ে যাই।
একইভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ট্যাক্স-কাস্টমস-এনবিআর, ইঞ্জিনিয়ারিং, করপোরেট হাউজ, এনজিও, সাংবাদিকতা, ব্যাংকিং সবক্ষেত্রেই যত কাছের মানুষ, বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়র রয়েছেন, সবার মাঝেই দেখি ভালো কিছু করার স্পৃহা, মানুষকে সেবা দেয়ার, মানুষের জন্য কিছু করার উন্নত মানসিকতা। এসব ‘মনোরম দৃশ্য’ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমরা স্বপ্ন দেখি আগামীর সুন্দর-বর্ণিল ভবিষ্যতের।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেলে এখনো দেখি, চাকরিপ্রত্যাশী বন্ধুবান্ধব ও সিনিয়র-জুনিয়র ভাইরা মানুষের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখে। এসব দেখে সত্যিই দেশকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে হয়। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সার্ভিসে আমার পরিচিত যারা যোগ দিয়েছেন, যোগদানের আগেও তাদের এমন স্বপ্ন দেখেছি। চাকরিজীবনে সেটা তারা প্রয়োগ করছেন, আর তাদের সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার কারণে মানুষ পাচ্ছে ‘দোরগোড়ায় সহজে দ্রুততম সময়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা’। পৃথিবী আসলেই বদলে গেছে। ‘এই নতুনের কেতন উড়ছে’।
কিন্তু, ‘নতুনদের’ মাঝে যতটা পরিবর্তন, সেই অনুপাতে ফলাফল হয়তো সবক্ষেত্রে সেভাবে আসছে না। এখানে আসলে অনেকগুলো ‘ফ্যাক্টর’ রয়েছে। আর সে-কারণে, এমন অনেক অফিস আছে, যেখানে আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালনে নতুন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই; তবু অনেকে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে।
‘পারিপার্শ্বিকতা বা প্রতিষ্ঠিত কোনো সিন্ডিকেট’, যা বহু সময় ধরে চলমান, সেটার কারণে ‘সেবাপ্রদান’ ক্ষেত্রবিশেষে বাধাপ্রাপ্ত হয়। কাজেই, যারা সেবাগ্রহীতা তাদেরও একটা ‘বড় দায়িত্ব’ রয়েছে। যেসব নবীন কর্মকর্তা ভালো-কিছু করতে চান, তাদের পথে ‘অযাচিত কোনো বাধা’ সৃষ্টি না করে তাদের সহযোগিতা করাই যুক্তিযুক্ত। কারণ, ‘নতুনের পৃথিবীর নতুনেরা’ মানুষের জন্য কাজ করে ‘পরম ভালোলাগা বা তৃপ্তি’ খুঁজে পেতে চায়। প্রয়োজন, সেবাগ্রহীতাদের নিষ্কণ্টক সহযোগিতা। এই ‘সেবাগ্রহীতাদের’ কেউ-কেউ অন্যায্যভাবে ‘অন্যায় কিছু’র প্রত্যাশা করে, যা প্রকারান্তরে অন্য সেবাগ্রহীতার জন্য অশুভ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার, একটা অফিসের সবাই মিলেই তো একটা ‘টিম’। নেতৃত্ব দেন অফিসপ্রধান। কখনো-কখনো টিমের কেউ ‘অন্যায্য’ কিছু করতে চাইলে তা ‘তাত্ত্বিকভাবে’ রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে হলেও ‘বাস্তব জগতে’ সেটা নয়। সে-কারণে অফিসের ওপরের দু-চারজন কর্মকর্তা ভালো কিছু ইনপুট দিলেও আউটপুট সেই অনুপাতে হয় না। তবে ‘কিছুটা বা অনেকটা’ যে আউটপুট আসে, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই।
নতুনের অগ্রজরা সবসময়ই যথাযথ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন, তাদের অতীত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। আর তার ফলই হলো আজকের নতুনদের এই ইতিবাচক পরিবর্তন।
মনে রাখতেই হবে, আমরা এখন শীতের ভোরে। কুয়াশায় দূরের কিছু দেখা না গেলেও কাছের তো কিছু দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে কুয়াশা কাটছে। কাটবে। ঢালাওভাবে নেতিবাচক মন্তব্য না করে সেবাগ্রহীতাদের উচিত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, অযৌক্তিক সমালোচনা না করে উৎসাহ দেয়া, তাহলেই সব কুয়াশা কাটবে, আসবে আলো ঝলমলে দিন।
১৭ আগস্ট ২০১৭ নতুন যেসব সতীর্থ এসিল্যান্ড ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়েছেন, ‘নতুনের কেতন উড়িয়ে’ সফল হোক তাদের পথচলা। সত্যিকারের মাটির সেবা পাক মাটির মানুষেরা।
লেখক: এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাতক্ষীরা।