রাজধানীতে সবাইকে ছাড়িয়ে এস এ খালেক

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ জুন ২০১৭, ১৪:০৭ | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০১৭, ১৩:৩১

ঢাকা মহানগরীর সংসদীয় আসনগুলোতে সাধারণত স্থানীয অধিবাসীদের মধ্য থেকেই সাংসদ নির্বাচিত হয়ে থাকেন। স্বাধীনতার পর ঢাকায় বিপুল ক্রেতাবসতি বাড়লেও ২০০৮ সালের আগে পর্য.ন্ত প্রায় সব কয়টি আসনে বিজয়ী হন স্থানীয় অধিবাসীরাই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখনো তা বজায় আছে।

আবার রাজধানীর গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক আসনে দলের প্রধানরাও নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন বিভিন্ন সময়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আছেন এই তালিকায়্।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তখনকার ঢাকা-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যদিকে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।

এ রকম ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঢাকার আসনগুলোতে প্রার্থী দেয়ার বেলায় দলগুলোর কাছে স্থানীয় অধিবাসীদের প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা রেয়েছে। ফলে ঢাকায় বেশিবার সাংসদ নির্বাচনে এগিয়ে তারাই। তবে সবাইকে ছাড়িযে আছেন মিরপুরের এস এ খালেক। মোট পাঁচবার সাংসদ নির্বাচিত হন বিএনপির এই নেতা।

এ ছাড়া চারবার করে সংসদ নির্বাচিত হন সাদেক হোসেন খোকা, এবং এ কে এম রহমতুল্লাহ। তিনবার করে নির্বাচিত হন বেশ কয়েকজন, যাদের সবাই স্থানীয় অধিবাসী।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে বিএনপির টিকিটে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন এস এ খালেক। এরপর ৮৬ ও ৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে পরপর দুবার সংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এই দুই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় তিনি জাতীয় পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করে বিজয়ী হন দলটির কেন্দ্রীয নির্বাহী কমিটির এই সদস্য।

একসময় এলাকায় এস খালেকের জনপ্রিয়তা এমনই ছিল যে, দেশের জাঁদরেল আইনজীবী ও রাজনীতিক সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনও বিপুল ভোটে পরাজিত হন তার কাছে।

ঢাকায় ভোটের লড়াইয়ে এস এ খালেকের মতো জনপ্রিয় আরেকজন নেতা বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা। তিনি টানা চারবার বিএনপির টিকেটে পুরান ঢাকা থেকে নির্বাচিত হন।

এমনই জনপ্রিয় আরেকজন আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমতুল্লাহ। তিনি তিনবার আওয়ামী লীগের হয়ে এবং একবার জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচিত হন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনসংখ্যার অনুযায়ী সংসদীয় আসন পুনর্বণ্টনের পর ঢাকার সংসদীয় আসন দাঁড়ায় ২০টি। এর মধ্যে ১৫টি ঢাকা মহানগরীর মধ্যে। আসন পুনর্বণ্টনের আগে ঢাকায় সংসদীয় আসন ছিল ১৩টি, যার মধ্যে মহানগরীতে ছিল আটটি। আসন পুনর্বণ্টনের পর অনেক জায়গায় এলাকা ঠিক থাকলেও আসনের ক্রম বদল হয়।

এস এ খালেক প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-১৪ আসনে। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসন থেকে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন তিনি। এরপর চতুর্থ, ষষ্ঠ ও অষ্ঠম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন।

টানা চারবার বিজয়ী সাদেক হোসেন খোকা ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন থেকে বিএনপির টিকেটে প্রথমবার সংসদ নির্বাচিত হন। তার এই বিজয়ের ধারা বজায় থাকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবন্ত। বিএনপির নেতা ঢাকার সাবেক এই মেয়র বর্তমানে ক্যানসার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় আদালতে বিচার চলছে।

চারবার বিজয়ী এ কে এম রহমতউল্লাহ প্রথম সাংসদ নির্বাচিত ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির টিকিটে। এরপর ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থ হিসেবে নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন বণ্টনের পর তিনি ঢাকা-১১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর পুনর্নির্বাচিত হন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী, কামাল মজুমদার, হাবিবুর রহমান মোল্লা, বিএনপির মির্জা আব্বাস, কামরুল ইসলাম, মেজর আবদুল মান্নান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা তিনবার করে সংসদ নির্বাচিত হন রাজধানীর বিভিন্ন আসনে।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে এবং সর্বশেষ ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ হন তিনি।

একই আসনে ১৯৯৬ সালে হাবিবুর রহমান মোল্লা প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর পূনর্বন্টনের পর ঢাকা-৫ আসন থেকে নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

এই আসন থেকে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে সংসদ নির্বাচিত হন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এরপর তিনি ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন একই আসন থেকে।

মেজর কামরুল ইসলাম বিএনপির টিকেটে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন তিনি।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসন থেকে বিএনপির টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মির্জা আব্বাস। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এবং অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একই আসন থেকে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন পুনর্বন্টনের পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসন থেকে সংসদ নির্বাচিত হন তিনি। বিগত নির্বাচনে তিনি পনর্নির্বাচিত হন একই আসন থেকে।

এই আসন থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আনোয়ার হোসেন।

ঢাকা-৭ আসনে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির টিকেটে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল। এরপর তিনি একই আসন থেকে চতুর্থ জাতীয় নির্বাচনেও সংসদ নির্বাচিত হন।

ঢাকা-৮ আসনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে বিজয়ী হন মীর শওকত আলী (বীর উত্তম)। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

এ আসন থেকে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হন হাজি মো. সেলিম। এরপর তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে, যিনি নবম সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ ছিলেন। হাজি সেলিম অবশ্য সম্প্রতি আবার আওয়ামী লীগের সাংসদ হিসেবে গণ্য হয়েছেন।

ঢাকা-৯ আসনে (পুরাতন) ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত হন খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। এরপর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

ঢাকা-১০ (পুরাতন) আসনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে বিজয়ী হন মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান। এরপর তিনি ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। পরে এ আসনে উপনির্বাচনে বিএনপির সংসদ সদস্য হন মোসাদ্দেক আলী ফালু।

এরপর এই আসনে (পুনর্বিন্যাসিত ঢাকা-১১) নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ঢাকা-১১ (পুরাতন) আসনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত কামাল আহমেদ মজুমদার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন পুর্নবন্টনের পরে তিনি ঢাকা-১৫ আসন থেকে নবম ও দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন।

ঢাকার পুনর্বিন্যাসিত বিভিন্ন সংসদীয় আসনে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে দুবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস (ঢাকা-১২), ঢাকা-১৩ আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪ আসনে আসলামুল হক, ঢাকা-১৬ আসনে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও ঢাকা-১৮ আসনে বেগম সাহারা খাতুন। ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচিত হন রাশেদ খান মেনন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

আর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপপনির্বাচনে সেখানে সাংসদ হন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।

(ঢাকাটাইমস/৪জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যেই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিলেন নুর

বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী 

কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

আজ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আওয়ামী লীগ নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে: মঈন খান

দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না: সালাম

নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চালাচ্ছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকার বন্দি করে রেখেছে: রিজভী 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :