ক্রেতারা ‘ভারতে’, শাড়ি বিক্রেতাদের মাথায় হাত

‘বড় ভাই একদিকে আসেন, দিদি এদিকে আসেন। অনন্ত একটা শাড়ি নিয়া যান। দাম কমাইয়া রাখবো’- ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের বেশিরভাগ শাড়ি দোকানিদের দেখা যায় বিক্রি করার জন্য এমন অনুনয়-বিনয়ের সাথে ক্রেতাদের দোকানে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এতগুলো দোকান, অথচ ক্রেতা হাতে গোনা কয়েকজন।
ধানমন্ডি হকার্সের নামকরা শাড়ি দোকান ‘শাড়ি প্লাজা’য় গিয়ে দেখা যায় ক্রেতা শূন্য। মালিক কবির মন খারাপ করে বসে আছেন। অথচ গত বছর এমন দিনে কারো সাথে কথা বলার সুযোগ ছিল না তাদের।
কেন এমন হলো জানতে চাইলে কবির বলেন, ‘অনেক বছর থেকে ব্যবসা করছি, এমন আর হয়নি। যাদের টাকা আছে সবাই শপিং করতে ইন্ডিয়া চলে যাচ্ছে। ১০ হাজার টাকার শাড়ি কিনতেও ইন্ডিয়া যাচ্ছে। ভিসা সহজে দেয়ায় ইন্ডিয়া যাওয়াও সহজ হয়ে গেছে। এত ভিসা দেওয়ায় আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। এই লস থেকে উঠার কোনো রাস্তা দেখছি না।’
আরেক শাড়ি ব্যবসায়ী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এবার আমাগো মাথায় হাত। কর্মচারীদের বেতন দিমু কেমনে বুঝতে পারতাছি না। মুদি ভারত যাওয়া সহজ কইরা আমাগো ব্যবসায় লালবাত্তি জ্বালাইয়া দিছে। হুনছি কলকাতায় থাকার হোটেল নাই, তাও মানুষ যাইতাছে। আমাগো সব টাকা ভারত নিয়া যাইতাছে।’
এই চিত্র শুধু ধানমন্ডি হকার্সে নয়! সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বসুন্ধরা সিটি, গাউছিয়া, গ্লোব শপিং সেন্টার, চাঁদনী চক, অরচার্ড পয়েন্ট, রাফা প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকাসহ রাজধানীর সব কয়টি শপিং মলের।
বসুন্ধরা সিটির ‘মনেরেখ’ শাড়ি সেন্টারের ম্যানেজার জুলফো ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রমজানের অর্ধেক সময় চলে গেলেও ব্যবসা জমছে না, আর জমবে বলে মনেও হয় না। ভারতে গিয়ে মার্কেট করছেন বাংলাদেশিরা। আর নারীরা এখন সেলোয়ার কামিজ বেশি পরে, দাম শাড়ির তুলনায় কম সবসময় পরা যায়। কিন্তু যারা দেশের বাজারে মার্কেট করবেন তাদের মনের অবস্থাও ভালো নেই, পকেটে টাকা নেই। ভ্যাট, ব্যাংক হিসাব নিয়ে ক্রেতারা অস্বস্তিতে আছেন।
মিরপুর রোডের মান্যবর ব্র্যান্ড যেটা কিনা ভারতীয়। তাদেরও একই অবস্থা। কেন এই অবস্থা কারণ দর্শাতে গিয়ে ইনচার্জ শাওন বলেন, ‘মানুষ এখন ইন্ডিয়ানমুখি। আমাদের ক্রেতারা তাদের সব কেনাকাটা ইন্ডিয়া থেকে করে নিয়ে আসছে, যে দুই একটা আইটেম বাদ পড়ে গেছে সেটা আমাদের থেকে নিচ্ছে।’
টুটুল সস্ত্রীক ভারত থেকে ঈদ শপিং করে এসেছে। কেন তিনি বাংলাদেশে নামিদামী শপিং মল থাকার পরও ভারতে শপিং করতে যান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন বিয়ে করেছি, তাই ভাবলাম ইন্ডিয়া থেকে শপিং করে আসি। কেনাকাটাও হবে, দেখাও হবে ঘোরাও হবে। স্ত্রী আবদার করেছে, সেটা না রেখে পারি!’
রাজধানীর শপিং মলগুলোতে ক্রেতা সংকট তা বলা যাবে না। মানুষের ভিড়ে শপিং মলগুলোতে ঢোকাই দায়। তবে ক্রেতা নেই শাড়ির দোকানে। এই সময়ে যেখানে ক্রেতারা শাড়ির ভাঁজ খুলে ক্রেতাদের দেখাতে ব্যস্ত থাকবেন, সেই সময় হাত গুটিয়ে বসে আছেন।
ভারতীয় ভিসা পেতে ই-টোকেন পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়া হয় পয়লা জানুয়ারি ২০১৬ থেকে। ভারতে ভ্রমণ ভিসার আবেদন করতে ই-টোকেন পদ্ধতি উঠিয়ে নেওয়ার পর ভারত যাওয়া খুব সহজ হয়ে যায়। যার বদৌলতে ক্রেতারা ভারতে গিয়ে ঈদ শপিং করছেন।
ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এনআই/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন