অধ্যাপক আকমলের ৩৭ বছরের সিলেবাস খতিয়ে দেখার ঘোষণা

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৪ | প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০১৮, ১৫:২৮
অধ্যাপক আকমল হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেন ৩৭ বছর শ্রেণীকক্ষে যে সিলেবাস পড়িয়েছেন, তা খতিয়ে দেখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি৷

শ্রেণিকক্ষে এই শিক্ষক ৩৭ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো ধরনের বিতর্কিত তথ্য পরিবেশন করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতেই এই উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অধ্যাপক আকমলের বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি’র অভিযোগ এনে করা মানববন্ধনে এই ঘোষণা আসে।

শিক্ষক সমিতির দাবি, ‘আকমল হোসেন গত ১৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত কথা বলে মুক্তিযুদ্ধকেই অবমাননা করেছেন৷

সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘অধ্যাপক আকমল হোসেন যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছে, তার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়েছে৷ আকমলের ৩৭ বছরের শিক্ষকতায় তিনি কী পড়িয়েছেন তা খতিয়ে দেখবে শিক্ষক সমিতি৷’

‘আমরা আকমলকে তার দেয়া বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলব এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি৷ তা না হলে শিক্ষক সমিতি কঠোর আন্দোলনে যাবে।’

আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন৷ ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষক সমিতি কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’র এক কর্মসূচিতে গত ১৯ জুলাই অংশ নেন অধ্যাপক আকমল। আর সেদিন তার দেয়া বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তুমুল বিতর্ক উঠেছে। কারণ, তিনি ওই ভিডিওতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন কি না, এই প্রশ্ন তোলেন।

ছড়ানে ভিডিওতে দেখা যায়, আকমল বলছেন, ‘আমার প্রশ্ন আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? তার পিতা যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিল তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?’

এই বক্তব্যের পর ছাত্র ও শিক্ষকরা তুমুল হাততালিও দেয়। আর এই বিষয়টি নিয়ে আকমলের রাজনৈতিক বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।

অবশ্য ঘটনার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক আকমল। তিনি দাবি করেন, তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচারেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি মনে হয়েছে।

আকমল বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মাপকাঠি হতে পারে কি না?’

‘বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আমি বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ একটি মহান ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে। এটা নিয়ে যেভাবে অবস্থান নেয়া হয়, বক্তব্য দেয়া হয় তাতে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়।’

প্রবীণ এই শিক্ষক জানান, তিনি তার শ্রেণিকক্ষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পড়িয়েছেন এবং সেখানে বরাবর বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক হিসেবেই তুলে ধরেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক আকমল লেখেন, “আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জানেন যে আমি যখন তাদের ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস’ কোর্সটি পড়িয়েছি সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটটি এ ভাবে তুলে ধরেছি। এবং বলেছি যে তিনি স্বশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু তার নামেই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।”

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অধ্যাপক আকমল বলেছিলেন, এই ব্যাখ্যার পর ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান হবে বলে তার প্রত্যাশা।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি অধ্যাপক আকমলের এই ব্যাখ্যা মানছেন না। তার তার ‘কটূক্তি’র প্রতিবাদে কর্মসূচি বাতিল করেননি তারা।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা রহমান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক সামাদ প্রমুখ৷

কোটা আন্দোলনের জন্য সরকারের নীতি দায়ী

বেতন দ্বিগুণ করার কারণে সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে উপরোক্ত কথাটি বলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন।

‘ফরাস উদ্দীন কমিশনের কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ অতিরিক্ত আমলা পোষণের কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা আজকে একাডেমিক পড়া না পড়ে বিসিএস পড়ছে৷’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এই শিক্ষক বলেন, ‘আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রতিদিন সকালে শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকে৷ যার কারণে এ ধরনের পলিসির চাপ কোটা আন্দোলনের উপর ওসে পড়েছে।’

ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/এনএইচএস/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :