নতুন ধানে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত চাষিরা

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ), ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪২ | প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১৩

কাটা শুরু হওয়ায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জসহ মুন্সীগঞ্জের আড়ৎ ও রাইস মিলগুলোতে নতুন বোরো ধান আমদানি হচ্ছে। বিশেষ করে হাওর জনপদের কয়েকটি উপজেলা এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আসছে। কিন্তু সঠিক দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা।

কৃষকদের দাবি, সরকার যদি ধান উৎপাদনে অনুদান বা ভর্তুকির ব্যবস্থা করে, তাহলে তারা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবেন।

তবে কৃষি কর্মকর্তা ও আড়ৎ-রাইস মিল মালিকরা বলছেন, এখনও ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটাই শেষ হয়নি। কিন্তু চাষিরা গরিব হওয়ায় এখনই ক্ষেতের ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে আসা বেশিরভাগ নতুন ধান ভেজা থাকায় তাই দামও কম। কয়েকদিন পর ধান শুকিয়ে ও গুদামে সরকারি মূল্যে বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা ভালো ও ন্যায্য দাম পেতেন।

বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ থেকে ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ এর আমদানি শুরু হয়েছে। হাওর এলাকা ছাড়াও স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার নতুন ধানও ভৈরবের পাইকারি আড়ৎগুলোতে আমদানি হচ্ছে। নতুন এই ধান কিনছেন রাইস মিল মালিকরাও।

আড়ৎ মালিকরা জানান, শুরুতে প্রতি মণ ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কমেছে। এখন আড়ৎগুলোতে প্রতি মণ মোটা ধান ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং চিকন ধান ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন চাল আমদানি হওয়ায় বাজারে চালের দামও কমে গেছে। প্রতি কেজি চিকন বিআর-২৮/২৯ চাল পাইকারিতে ৩৬ টাকা ও মোটা চাল ৩৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে নতুন ধান কিনে চাল তৈরি ও বাজারে সরবরাহ করে তারাও লাভবান হচ্ছেন না বলে দাবি রাইস মিল মালিকদের।

কৃষকদের দাবি, প্রতি বিঘা বোরো জমিতে সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষিশ্রমিক, জ্বালানি তেলসহ সব মিলিয়ে ১২-১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। খানিপ্রতি গড়ে ১৮-২০ মণ ধান উৎপাদিত হলেও বর্তমান মূল্যে মুনাফা হচ্ছে না।

সরেজমিনে জানা গেছে, বাণিজ্য নগরী ভৈরব বাজারের শতাধিক ধানের আড়তে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার প্রায় ২০টি উপজেলা থেকে নতুন ধান আমদানি হচ্ছে। হাওরের সঙ্গে নদীপথে ভৈরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ট্রলারযোগে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আসছে। আড়ৎ মালিকরা কৃষক ও ফড়িয়া পাইকারদের আমদানি করা সেসব ধান কমিশনে কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন।

ক্রেতারা বলছেন, দুই মাস আগে মোটামুটি সন্তোষজনক দামে ধান বিক্রি হয়েছে। আর মিল মালিকরা জানান, আমদানিকৃত বেশিরভাগ নতুন ধান ভেজা থাকায় দাম কম।

সরকার এবার প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা ও চালের দাম নির্ধারণ করেছে ৩৬ টাকা। তবে সরকারি খাদ্যগুদামে শুকনা ধান সরবরাহ করতে হবে। স্থানীয় গুদামগুলোতে এখনও ধান-চাল কেনা শুরু হয়নি। তবে আগামী মাস থেকে সরকার ধান-চাল কিনবে। কৃষকের উৎপাদিত সব ধান সরকার কিনতে পারবে না এবং সরকারি গুদামে ধান দেওয়া জটিল বলে বেশিরভাগ কৃষক বাজারেই ধান বিক্রি করে আসছেন।

ধান বিক্রেতা সরুজুল ইসলাম জানান, ১২-১৩ হাজার টাকা ব্যয় করে এক খানি জমিতে ধানের ফলন হয় ১৭-১৮ মণ। বর্তমান বাজার দামে তা বিক্রি করলে কৃষকের উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেকই ঘাটতি থাকছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরবে আসা আ. করিম মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর গ্রামের মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জমি চাষ করি। ফসল উঠানোর পর দেনা শোধে তাড়াতাড়ি ধান বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করে কোনো মুনাফা পাব না। সরকারি মূল্য পেলে লাভবান হতাম।’

ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী শরীফ খান বলেন, ‘আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক গরিব। তাই তাদের বৈশাখ মাসের শুরুতেই ধান বিক্রি করতে হয়। অথচ কয়েকদিন পর বিক্রি করলে ভালো দাম পেতে পারতেন। সরকারি গুদামগুলোও বেশি বেশি ধান কিনলে কৃষকরা ন্যায্যদাম পেতেন।’

নতুন ধানের দাম প্রতি বছরই শুরুতে কম থাকে এবং বাজারে কম-বেশি দামের বিষয়টি আড়ৎ মালিকদের ওপর নির্ভর করে না বলে দাবি করেছেন ভৈরব খাদ্যশস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর। তবে তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আসা নতুন ধানের বেশিরভাগই ভেজা, তাই দাম কম। শুকিয়ে বিক্রি করলে দাম একটু বেশি পেতেন কৃষকরা।’

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :