স্বতন্ত্র রাজনীতিতে ফিরতে হবে ছাত্ররাজনীতিকে

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ছাত্ররাজনীতি থাকা-না থাকা কিংবা কেমন হওয়া উচিত- এ রকম প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন চারজন শিক্ষাবিদ-গবেষক। তারা বলছেন বৃহত্তর নেতৃত্বের প্রয়োজনে ছাত্ররাজনীতি থাকা দরকার। তবে সেটি হতে হবে স্বতন্ত্র। দলীয় রাজনীতির বাইরে। আর কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে তার ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে পারে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জহির রায়হান, তানিয়া আক্তার ও ইসরাফিল হোসেন।
ছাত্ররাজনীতি এলোমেলো হয়ে গেছে
আফসান চৌধুরী, সাংবাদিক-গবেষক
ছাত্ররাজনীতি এখন বেশ এলোমেলো হয়ে গেছে। ষাটের দশকে যখন ছাত্রনীতি স্বতন্ত্র ছিল তখন ভালো ছিল। তারা তখন শিক্ষা সংস্কার তথা দেশ সংস্কারে ভ’মিকা রাখত। এখনকার ছাত্ররা শুধু রাজনীতিই করে। এর বড় কারণ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় ছাত্রদের সহায়তা নিচ্ছে। ফলে শক্তির অপব্যয় হচ্ছে।
এখনকার ছাত্ররাজনীতির কোনো নিজস্ব মূল্যবোধ নেই, দর্শন নেই। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততায় নিজেদের পরিচালিত করছে। ছাত্ররাজনীতিতে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতার কারণে আজকের এ অবস্থা।
এ থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই আগের মতো স্বতন্ত্র রাজনীতিতে ফিরে যেতে হবে ছাত্ররাজনীতিকে। সেখানে নিজস্ব মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তাদের। তবে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের সম্পৃক্ততা থেকে কীভাবে ছাত্রদের দূরে রাখবে।
প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নতুন নয়
মিজানুর রহমান, জবি উপাচার্য
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে পারে। এমনটা আগেও হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলে দেশে নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্ররাজনীতিতে যে সহিংসতা ঘটছে, তা থেকে উত্তরণ করা জরুরি।
অনেক সময় বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নজির দেশে অনেক আছে। এমনকি অনেক জেলা-উপজেলাতেও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হয়েছিল। যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা বন্ধ করা হয়েছিল সে অবস্থার উন্নতি হলে আবার সেখানে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়েও নেওয়া হয়।
ছাত্ররাজনীতি একেবারে নিষিদ্ধ করার মতো তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই নতুন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। আর দেশ পায় নতুন নতুন রাজনীতিবিদ। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে গেল দেশ একসময় নেতৃত্বশূন্যতা অনুভব করবে।
সহিংস ও প্রভাববিস্তারকারী এই ছাত্ররাজনীতি সুবিধাবাদীদের কাজ। যাদের কারণে ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কিত হচ্ছে তারা আসলে সুবিধাবাদী ছাত্র। এমন কিছু ছাত্র সব সময় সব সরকারের আমলেই থাকে। তারা আদর্শ নয় নিজেদের আর্থিক লাভ, ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অসাংগঠনিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে। তাদের নির্দিষ্ট কোনো দল নেই। তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
ছাত্ররাজনীতিতে হত্যা এবং একে-ওপরের ওপর প্রভাব খাটানো আশির দশকে শুরু হয়। এই সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। তারপর দীর্ঘদিন এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। কিন্তু ইদানীং আবার সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্ররাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারীরাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
ছাত্ররাজনীতির হত্যাকা- রোধে শুধু পুলিশ বা র্যাবকে দায়িত্ব দিলেই শেষ হবে না। এটা বন্ধের জন্য সামাজিকভাবে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং শিক্ষকদের আরও সচেতন হতে হবে। শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের প্রতি লক্ষ রাখলে অনেকাংশে এসব কর্মকা- প্রতিহত করা সম্ভব। অচিরেই এই পরিস্থিতি উত্তরণ গঠাতে হবে। অন্যথায় সামনে আরও দুর্দিন অপেক্ষা করছে।
ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি হতে পারে
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চরিত্র ফুটে ওঠে ছাত্ররাজনীতিতে। এটা ঠিক নয়। আমার মতে, এ ধরনের ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই।
ক্যাম্পাসভিত্তিক স্বতন্ত্র ছাত্ররাজনীতি থাকতে পারে। ছাত্র সংসদ যেমন ডাকসুর মাধ্যমে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা দেখবে এর সদস্যরা। কিন্তু বর্তমান ছাত্ররাজনীতি কতটুকু ছাত্রদের কল্যাণ করে!
ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্রকল্যাণে
অধ্যাপক মেজবাহ-উল আজম সওদাগর, জবি
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি দরকার। তবে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা ছাত্ররাজনীতির জন্য খারাপ। ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্রদের কল্যাণে।
কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররাজনীতিতে কলুষ ঢুকে গেছে জাতীয় রাজনীতি থেকে। ছাত্ররাজনীতি থাকবে। তারা ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবে। তাদের ফান্ডামেন্টাল ডিলিংস হবে ছাত্রেদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা। কোনো রাজনৈতিক দলের এডেন্ডা বাস্তবায়ন নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো মত প্রকাশের উৎকৃষ্ট জায়গা। ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু কথা বলতে দিতে হবে। সব ছাত্রসংগঠনকে এ ব্যাপারে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন