দুই নদীর মোহনা রাঙাল একদল তরুণ
একদল তরুণের উদ্যোগে নানা রঙে রেঙেছে পায়রা-বিষখালী নদীর তীর। রঙিন পাথরের ব্লকে উপকূলীয় জেলা বরগুনার পায়রা-বিষখালীর মোহনা সন্নিহিত এক কিলোমিটার নদীতীর দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। সবুজ বরগুনা নামের একটি সংগঠনের কর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রমে নান্দনিক হয়ে ওঠা এই জায়গায় প্রতিদিন বেড়াতে এসে মুগ্ধ হচ্ছেন মানুষ।
জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বের এই এলাকাটির নাম পালের বালিয়াতলী। দুই নদীর মোহনার প্রায় এক কিলোমিটার জায়গায় এখন দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। নদী ভাঙনের হাত থেকে এই জায়গাকে নিরাপদে রাখতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিছানো ব্লক ঢেকে দেয়া হয়েছে নানান রঙ দিয়ে।
শুধু তাই নয়, দুর্গম এই এলাকার মানুষ যাতে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় সেজন্য লাগানো হয়েছে ৩০টির মতো বটগাছ। আয়োজকদের ভাবনা, বটগাছগুলো একদিকে যেমন ছায়া দেবে, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলাকার মানুষ নিরাপত্তা পাবে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি করে গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর মোহনার ব্লক বিছানো বাকি অংশটুকু রাঙিয়ে দেয়া, পাশাপাশি সেখানে যেতে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো সড়ক এখনো কাঁচা আছে তাও উন্নত করার ব্যবস্থা করবেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা এই তরুণদের কাজকে সাধুবাদ জানাই। পর্যটনের বিকাশসহ এমন সুন্দর সুন্দর কাজকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’ ‘সবুজ বরগুনা’র প্রতিষ্ঠাতা আরিফ খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন আমাদের সঙ্গে থাকলে এসব ইতিবাচক কাজ করতে আমাদের আরও সুবিধা হবে। সবাই উৎসাহ পাবে। যদি কেউ এসব কাজে এগিয়ে নাও আসে আমাদের কার্যক্রম চলবে।’
জানা গেছে, চার বছর আগে ‘কংক্রিটের শহর সবুজে ঢেকে দেয়ার লক্ষ্য’ নিয়ে সবুজ বরগুনার যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বরগুনা শহরে এবং আশপাশে সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃঞ্চচূড়া, বকুল, নিমগাছসহ নানা প্রজাতির ফলজ গাছ লাগানো হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে এবং নিজেদের অর্থায়নে গাছগুলো লাগানোর পর এগুলোকে সংগঠনের সদস্যরাই পরিচর্চা করে বড় করেছে। ইতোমধ্যে অনেক গাছ বড়ও হয়ে গেছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ সংগঠনের সদস্য। তবে বেশির ভাগই বয়সে তরুণ, শিক্ষার্থী। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এমন মানুষই নেয়া হয় সংগঠনে। ইতোমধ্যে সংগঠনের সদস্যের মধ্যে পাঁচজন প্রতিষ্ঠাতার ‘গ্রান্ড খান গেস্ট হাউজে’ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। যারা এখানে খণ্ডকালীন কাজ করছেন এবং পড়াশোনাও করছেন।
নদীর তীর রাঙিয়ে দেয়ার ভাবনা কীভাবে আসল- জানতে চাইলে আরিফ খান বলেন, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার তীরে এমন দৃশ্য দেখে চিন্তা করি বরগুনাও নদীবেষ্টিত এলাকা। এখানে এমনটা করা যায় কি না। সেই ভাবনা থেকে জায়গাটা বেছে নেয়া। চার দিন ধরে সংগঠনের পক্ষ থেকে সদস্যরা মিলে রাঙিয়ে দেয়ার কাজটি করেছি। বটগাছ লাগানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন উৎসাহ দিয়েছে। গাছগুলো তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এই জায়গাটি হবে জেলার সব থেকে সুন্দর স্পট। কারণ এর সামান্য সামনেই সাগর। কিছুদূরেই শুভ সন্ধ্যা নামের সৈকত।
ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/বিইউ/ডিএম