সোনার বাংলা: স্বপ্ন নয় সত্যি

মৌলি আজাদ
| আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৬ | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২১
মৌলি আজাদ

৫৬,০০০ বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে সবুজে ঘেরা নদীমাতৃক এই দেশটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্থান করে নেয়। এরপর পেরিয়ে গেছে বহু বছর। প্রাকৃতিক আঘাত, বিদেশিদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ, নিজ দেশীয় মীরজাফরদের ষড়যন্ত্র গেছে সবুজ শ্যামল এই দেশটির ওপর দিয়ে। অপশাসন-জুলুমে নীরবে গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছে দেশটি তথা বাংলার জনগণ। কিন্তু যে দেশের মানুষ লড়াকু, যারা বাংলা ভাষায় কথা বলবে বলে নিজের জীবন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি, সে দেশের মানুষ কি আর দমে যাওয়ার পাত্র? তারা হাল ছাড়েনি। তারা দেশকে সঠিক পথে নেবার জন্য বারবার খুঁজেছে যোগ্য নেতৃত্বের। কিন্তু চাইলেই কি একটি দেশ গড়ার জন্য যোগ্য নেতা পাওয়া যায়? দেশে দেশে কি যোগ্য নেতা সুলভ? না তা নয়। হয়তো কোনো এক কালে একটি দেশ-জাতিকে নতুন পথের সন্ধান দেখাতে ধূমকেতুর মতো যাঁর আবির্ভাব হয়। একদা আমরাও পেয়েছিলাম সেরকমই একজন নেতা। যিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর নেতৃত্ব, যাঁর আহ্বানে এ বাংলার জনগণ ‘১৯৭১’ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে পেয়েছিল ‘বাংলাদেশ’। পেয়েছে ‘জাতীয় পতাকা’ ও ‘সংবিধান’। ‘১৯৭১’ সংখ্যাটি বাংলার জনগণের কাছে শুধু যেন একটি সংখ্যা নয়, একটা অনুভূতির নাম। ‘১৯৭১’ সংখ্যাটি শুনলে/কোথাও লেখা দেখলে বাংলাদেশিদের রক্তে কাঁপন ধরা খুবই স্বাভাবিক। আর ‘১৬ ডিসেম্বর’ যেন আমাদের আনন্দাশ্রু। কিন্তু বড় অভাগা বাঙালি আমরা। সেদিন যার নেতৃত্বে এ দেশ পেয়েছিলাম আমরা তাঁকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারিনি। তাই এ দেশটির জনগণকে পদে পদে নানা মাশুল দিতে হয়েছে।

কিন্তু একটি দেশে যতবার যত বড় ‘অন্ধকারই’ আসুক না কেন শেষ তো আছেই, তাই না? সেইসব ‘অন্ধকার’ শেষে আলোর পথ দেখিয়েছেন জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাহসী পদক্ষেপ আর দূরদর্শী নেতৃত্বে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ জেগে উঠেছে।

বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের এক রোল মডেল। যে দেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে ব্যঙ্গ করা হয়েছিল সে দেশের মাথাপিছু আয় আজ ১৮২৭ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদ-। শিক্ষাকে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত আধুনিক-যুগোপযোগী-সুলভ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার নিচ্ছে একের পর এক নানা পদক্ষেপ। আজ আমাদের দেশে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ১৫২টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আজ আমাদের দেশে বিমান চালনা শেখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যথাক্রমে পরীক্ষার জন্য মানসিক ও আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত করার জন্য চালু হয়েছে সমন্বিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ও সমন্বিত কৃষি শিক্ষাবিষয়ক ভর্তি পরীক্ষা (যা একসময় সবাই অসম্ভব মনে করতো)। আজ বছরের প্রথম দিনই মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বোর্ডের নতুন বই পাচ্ছে, যা তাদের বছরের প্রথম দিনই জীবন খাতায় যোগ করে আনন্দ।

মেয়েদের শিক্ষার পেছনে সরকার এতটাই জোর দিচ্ছেন যে, বর্তমানে বেশির ভাগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় মেয়েরা ছেলেদের চেয়েও বেশিই ভালো ফলাফল করছে। আজ আমাদের দেশের নারীরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন, যা একটি দেশ এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম নির্দেশক। নারীর অধিকার রক্ষায়, তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথে যাতে কেউ অনর্থক পথ রুদ্ধ না করে তার জন্য নেওয়া হয়েছে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও প্রণয়ন হয়েছে আইন। আজ আমাদের দেশের নারীরা মাতৃত্বকালীন সময়ে বেতনসহ ৬ মাসের ছুটি পাচ্ছেন, যা বিশ্বের অনেক ধনী দেশের নারীরা কল্পনাও করতে পারে না।

শিশু মৃত্যুহার কমানো, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, নিজ অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মেট্রোরেলের কাজ শুরুকরণ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ভূমিকা রেখে বিশ্বের ক্ষমতাশালী-শক্তিধর উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টিও আমাদের ওপর পড়তে বাধ্য হয়েছে। ভাবতেই ভালো লাগে আজ বাংলাদেশের সকল কাজে যুক্ত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি। সত্যি বলতে কি আমরা যে ‘ডিজিটালাইজড দেশ’ হওয়ার পথে কোনো দিন হাঁটবো তা কি কখনো ভেবেছিলাম? কিন্তু স্বপ্ন মনে হলেও আজ তা বাস্তব। পরিপূর্ণ বাস্তবায়তায় রূপ দেওয়ার পথে দেশের একঝাঁক পরিশ্রমী মেধাবী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করে যাচ্ছেন। এর কারণ কি? কারণ একটাই দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতা, দ্রুত সেবা ও কম খরচ।

অর্থাৎ নতুন পথের সন্ধান দেখেছে যে বাংলাদেশ সে আর পিছু ফিরতে চায় না। ৪৮ বছরের ‘পরিণত’ বাংলাদেশের স্বপ্ন শুধু এখন এগিয়ে যাওয়ার, পেছানোর নয়। এই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করার জন্য ওতপেতে থাকা অপশক্তি মাঝে মাঝে নানা ফাঁদ তৈরি করে। কিন্তু বাংলার জনগণের সুতীক্ষè চোখ-ফাঁদে পড়ার জন্য নয়। দেশের সর্বত্র দুর্নীতি মুক্ত রাখার ইচ্ছে যদি সাধারণ জনগণের মধ্যে থাকে তবে এ দেশের এগিয়ে যাওয়ার গতি কে থামাতে পারবে বলুন? এবার বিজয় দিবসে বাংলার ১৬ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প হবে: যেখানেই দুর্নীতি দৃশ্যমান সেখানেই চলবে প্রতিবাদ। তবেই আমাদের দেশ সোনার বাংলায় রূপ নিলো বলে...।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :