বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের এডি’র বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ মার্চ ২০২০, ২২:১৮
অ- অ+

অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিক ‘জঙ্গি’ হাফেজ আহমেদকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের অভিযোগে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) আবজাউল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলার পর থেকেই সহকারী পরিচালক আবজাউল কর্মস্থল থেকে গত তিন দিন নিরুদ্দেশ রয়েছেন এবং তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নাম্বারও বন্ধ রেখেছেন।

আবজাউল হোসেন গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগ দেন। এর আগে তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিস এবং তারও আগে রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত ছিলেন।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে তার সম্পর্কে কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ জানিয়েছেন, তিনি ছুটিতে আছেন। আবার কেউ বলেছেন, তারাও তাকে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

দুদকের মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে আবজাউল হোসেন রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদ। আবেদনে নিজেকে রাজশাহীর ছোটবন গ্রামের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করেন তিনি। মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করেই প্রি-এনরোলমেন্ট সম্পন্ন হয়। পরে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সেই আবেদনটি নিজ জিম্মায় রাখেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী রঞ্জুলাল সরকার। পরে তার পূর্ব পরিচিত ট্রাভেল এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী গিয়াস উদ্দিন এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমাগ্রহণ থেকে পাসপোর্ট দেয়া পর্যন্ত সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য তারা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে ওই বছরের ১২ জুলাই পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য অন্য ৪৩টি পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে হাফিজ আহমেদেরও প্রয়োজনীয় তথ্যও পাঠানো হয় রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখায়। পরে ৩১ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে হাফিজ আহমেদকে ভারতীয় নাগরিক বলে প্রতিবেদন পাঠানো হয় পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু পুলিশের ওই প্রতিবেদনের তথ্য গোপন করে ফেলেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাসপোর্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদনের জন্য মডিউলে চলে যায়। এরপর একই বছরের ৩০ আগস্ট পাসপোর্টটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ৭ সেপ্টেম্বর পাসপোর্টটি গ্রহণ করেন হাফিজ আহমেদ।

পাসপোর্ট রিলিজের পরপরই হাফিজের সব আবেদন ও নথিপত্র পাসপোর্ট অফিস থেকে গায়েব করে ফেলেন কর্মচারী-কর্মকর্তারা। পাসপোর্ট পেয়েই ভিসা আবেদন করেন হাফিজ আহমেদ। ভিসা হাতে পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০৩৫ ফ্লাইটযোগে সৌদি আরবের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তার বাংলাদেশে আগমনের আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে ঘটনাটি তদন্ত করা হয়। তদন্তে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহমেদের বিপক্ষে আসা পুলিশ প্রতিবেদন গোপন করে পাসপোর্ট ইস্যু ও বিতরণসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মূল রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার প্রমাণ পায় দুদক।

এরপর গত বৃহস্পতিবার দুদক রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক আবজাউল হোসেনসহ সাতজনের নামে মামলা করা হয়।

দুদকের মামলার দিন থেকেই বগুড়া থেকে নিরুদ্দেশ হন সহকারী পরিচালক আবজাউল হোসেন। এমনকি তার ব্যক্তিগত ফোনও বন্ধ গত তিনদিন ধরে। ফলে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার ও সোমবার অসংখ্য মানুষের ভিড়। পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। পাসপোর্টের আবেদন জমা নেয়া হলেও সহকারী পরিচালক না থাকায় আবেদনগুলো অফিসেই পড়ে থাকছে।

বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট শহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, সহকারী পরিচালক ছুটিতে আছেন। তবে অফিসের প্রয়োজনে তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/কেএম/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভেষজ মহৌষধ আনারস কিডনির পাথর দূর করতে সিদ্ধহস্ত, ওজনও কমায় দ্রুত
খিলক্ষেতে কাভার্ডভ্যান চাপায় ২ পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিহত
পরীক্ষায় নকলের শাস্তি চার বছরের নিষেধাজ্ঞা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩, নিখোঁজদের সন্ধান চলছে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা